একটা সময় পর্যন্ত কাঠুরে বা যারা কাঠ কেটে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করেন, হ্যাকার বলতে তাঁদের বোঝানো হলেও সাইবার জগতে এর মানে দাঁড়ায় ভিন্ন! শুরুতে কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়াবলী নিয়ে যারা বিশেষভাবে দক্ষ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইটি সাপোর্ট দিতেন তাঁদের হ্যাকার বলে সম্বোধন করা হলেও হ্যাকিংয়ের সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে কালে কালে পাল্টে গেছে হ্যাকারের বৈশিষ্ট্যও! তবে হ্যাকার বলতে সাধারণ মানুষ যেমন শুধু ডাকু কিসিমের লোক, যার কাজ কেবল বিভিন্ন ওয়েবসাইট দখল করে নিজের নাম/ঠিকানা ঝুলিয়ে দেয়া বা কারো ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড বদলে দেয়া কিংবা গোপনে অন্য কারো কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের ডাটা চুরি করা বুঝি – তা না।
সংখ্যায় খুব কম হলেও ভয়াবহতার জন্য মানুষ হ্যাকার বলতে কেবল বিপথগামী আইটি এক্সপার্টদের বুঝে থাকে। কিন্তু এর বাইরেও হ্যাকারদের বড় একটি অংশ আছে যাদের কারো কাজ নতুন প্রযুক্তি/সফটওয়্যার/ডিভাইস তৈরি হওয়ার পর তার ‘বাগ’ তথা সমস্যা পরীক্ষা করে বের করা আবার কারো কাজ নিত্য ব্যবহৃত ওয়েবসাইটের নিরাপত্তাত্রুটি খুঁজে বের করা ইত্যাদি। এরা যে কেবল গুগল বা ফেসবুক নিয়েই কাজ করেন, তা না, আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে আর তাতে যদি কোনো বড় ত্রুটি থাকে তবে অ্যাডমিন হিসাবে দেয়া ইমেইলে আপনিও পেতে পারেন তা কীভাবে সারাবেন তার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা!
চলুন তবে চিনে রাখি – কে কোন ধরণের হ্যাকার:
হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
এরা নির্দোষ হ্যাকার, মূলত বিভিন্ন সিস্টেম যাচাই করে দেখাই এদের কাজ! সিস্টেমে যদি কোনো ঘাটতি বা নিরাপত্তা ত্রুটি থাকে তবে এরা তা সংশ্লিষ্ট অ্যাডমিনকে জানিয়ে দেয়।
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
হ্যাকার বলতে আমরা সচরাচর যাদের বুঝে থাকি, তারা হচ্ছে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার! বিভিন্ন ওয়েবসাইট দখল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট কেড়ে নিয়ে ব্যবহারকারীর সুনামহানি ঘটানোর পাশাপাশি অন্যের কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের ডাটা সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে এরাই নিয়োজিত থাকে।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার
ব্ল্যাক এবং হোয়াইটের মাঝামাঝি থাকা গ্রে হ্যাকাররাও বিভিন্ন সিস্টেমের ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়, এরা আবার ‘চাইলে’ তা সারিয়েও দেয় কিন্তু সিস্টেম অ্যাডমিনকে সেজন্য কিছুটা মাশুল দিতে হয়! আরও মজার বিষয় হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে যেমন প্রতিষ্ঠিত কোনো ওয়েবসাইটে ত্রুটি পাওয়া গেলে এরা গল্পের প্যাঁচার মতো সিস্টেম অ্যাডমিনকে না জানিয়ে রটিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়াময়।
ব্লু হ্যাট হ্যাকার
এরা কাজ করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে, কোনো সিস্টেম প্রচলন করার আগে কিংবা চলমান সিস্টেমের নিরাপত্তা ত্রুটি যাচাই করার জন্য তাঁদের নিয়োগ করা হয়।
এলিট হ্যাকার
হ্যাকারদের মাঝে সবচেয়ে অভিজাত এই হ্যাকাররা প্রাযুক্তিকভাবেও সবচাইতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কভিত্তিক ‘মাস্টার্স অব ডিসেপশন’ এমন একটি এলিট হ্যাকার গ্রুপ। বিশেষ বিশেষ কাজে সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে এরা কাজ করলেও সাধারণত পর্দার অন্তরালে থাকতেই এরা পছন্দ করেন। তবে, হঠাৎ হঠাৎ বড় আকারের সাইবার হামলার সুরাহার সময় এদের কারো কারো পরিচয় সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।