দিনশেষে দেশের বাইরে থাকা বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলতে কিংবা বাইরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে হুট করে তোলা ছবি সবার সাথে শেয়ার করতে – ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়াম ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। শুধু তাই নয়, ইকমার্স থেকে শুরু করে নামীদামী সব ব্র্যান্ডের বিশেষ দিনের জমকালো অফার থেকে শুরু করে নিয়মিত মার্কেটিং এসবও এখন অনলাইন কেন্দ্রিক। ফলে একদিকে যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনে দিনে প্রায় সবাই যুক্ত হচ্ছে তেমনি হ্যাকাররাও সবচেয়ে বেশি ওঁত পেতে থাকে এখানেই। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিরাপদ থাকার উপায় হিসাবে চলুন তবে দেখে নেই করণীয়সমূহ:
জেনে কিংবা না জেনে, আমরা অনেক সময়েই বাসা কিংবা অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ামের ‘অ্যাবাউট মি’ পাতায় উল্লেখ করি। সাধারণত, পাবলিক প্রোফাইলে কেবল নাম, জেলা আর কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন – এর বাইরে বেশি কিছু উল্লেখ না করাই ভালো। এছাড়াও বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে প্রোফাইল পিকচার পাবলিক না রেখে ফ্রেন্ডস মুডে রাখা নিরাপদ। বন্ধুদের জন্য রাখা বিস্তারিত তথ্যে পদ, শখ ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। তবে পাবলিক কিংবা ফ্রেন্ডস কোনো তথ্যেই ইমেইল আইডি, ফোন বা মোবাইল নম্বর কিংবা কোনো ধরণের ব্যাংকিং তথ্য উন্মুক্ত রাখা উচিত নয়।
সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন ইত্যাদি পাবলিক মুডে না দিয়ে কেবল আপনার বন্ধু তালিকার মানুষদের জন্য ফ্রেন্ডস অনলি করে শেয়ার করুন। বন্ধু তালিকায় যে কাউকে যোগ করার আগে কিংবা কারো আহবানে সাড়া দেয়ার আগে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন কি না তা যাচাই করে নিন। এছাড়াও, মিছেমিছি অন্যদের লিস্ট ধরে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট না পাঠিয়ে নিজের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকাটাই বুদ্ধিমানের।
ব্রাউজিং করা অবস্থায় ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার লগইন পাতা হাজির? ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড লেখার আগে একবার ওয়েব ঠিকানাটি যাচাই করে নিন। অনেক সময় ফেসবুক বা এমন কোনো জনপ্রিয় সাইটের লগইন পাতার মতো হুবহু পাতা সাজিয়ে মানুষের আইডি, পাসওয়ার্ড দখল করে নেয়া হয়। এছাড়াও, অপরিচিত কোথাও থেকে লগইন না করা ও একান্ত প্রয়োজন হলে কাজ শেষে তাৎক্ষণিক লগআউট করা উচিত।
পরিচিত কারো কাছ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ পাওয়া মানেই যে সে পাঠিয়েছে – এমনটা সব সময় ভাবার কোনো কারণ নেই! অনেক সময় শখের বসে বা আর্থিক প্রতারণার সুযোগসন্ধানীরা পরিচিত মানুষ সেজে এমন বার্তা পাঠিয়ে থাকে। তাই, পরিচিত কোন মানুষের কাছ থেকেও অবান্তর বা সন্দেহজনক বার্তা পেয়ে থাকলে অবশ্যই কল করে বা সরাসরি জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া নতুন বন্ধ খুঁজে পেতে ফোনবুক কিংবা ইমেইল লিস্ট স্ক্যান করে দেখতে চায়, নিজের ও আপনার পরিচিত মানুষের নিরাপত্তার জন্য এটি হুমকিদায়ক হতে পারে।
পরিচিত মানুষের বাইরে বন্ধুতা না করার পাশাপাশি অপরিচিত আইডি থেকে আসা মেসেজ বা চ্যাটিংয়ের আহ্বানেও সাড়া না দেয়াই ভালো। একান্ত পরিচিত মনে হলে সরাসরি ঠিকানা বা নম্বর জানতে চান, পরিচিত কি না নিশ্চিত হয়ে আলাপ করাই ভালো।
অনেক সময় দেখা যায় বিশেষায়িত ছবি তুলতে, প্রথম শেয়ার করা ছবি খুঁজতে বা কে আপনার পোস্টে সবচেয়ে বেশি লাইক দিয়েছে – এসব জানতে এবং গেম খেলতে আমরা অনেক সময়ই থার্ড পার্টি অ্যাপের সাহায্য নেই। এসব অ্যাপ থেকে যেকোনো সময় আপনার তথ্য বা ছবি ‘লিক’ হওয়াসহ হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে এসব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
বাসায় যদি ১৮-বছরের কম বয়সী কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থাকে, তবে অবশ্যই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করা উচিত। আজন্য চাইলে অ্যাডভান্সড প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবাসহ প্রিমিয়াম কোনো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিভাইরাস এক দিকে যেমন যেকোনো ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থেকে আপনার ডিভাইস নিরাপদে রাখবে তেমনি বাচ্চারা ইন্টারনেটে কী করছে তাও আপনি আড়াল থেকে নজরে রাখতে পারবেন।