প্রযুক্তি নির্ভরতার এই যুগে আইটি সক্ষমতা যেকোনো ব্যবসার মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিশ্ববাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে সাহায্য করে। অন্যথায়, শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং সামগ্রিক ব্যবসাকে ধ্বসের মুখে নিয়ে দাঁড় করাতেও এই একটির অভাবই যথেষ্ট! যেহেতু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এখনকার সময়ের যেকোনো ব্যবসার অপরিহার্য উপাদান, তাই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও এখন আর কেবল আইটি বিভাগের নেই, বোর্ডরুম প্রায়োরিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। কিন্তু যতখানি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, ততটা এখনও সবাই হয়ে উঠতে পারেনি। সম্প্রতি আমরা অনেক প্রতিষ্ঠান পাচ্ছি যারা সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং সাইবার সুরক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। কিন্তু, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয় যেখানকার আইটি বিভাগ ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসকেই নিরাপদ বলে বিশ্বাস করে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই হুমকির মুখে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
আশার কথা এই যে, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা নির্বাহীরা খবর নেন না – এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোণা। কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৬ সালের সিইও আউটলুক সার্ভে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীবৃন্দ যে পাঁচটি সমস্যাকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা বলে ভাবছেন তার প্রথমটি হচ্ছে সাইবার হুমকি। আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধের তীব্র অবস্থা তুলে ধরতে তখনকার সময়ের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ ‘ভুকা ওয়ার্ল্ড’। সাইবার যুদ্ধের এখনকার তীব্রতাও এই শব্দটি দিয়ে বোঝানো যেতে পারে!
ভুকা – যা কি না ভোলাটাইল, আনসার্টেই্ন, কমপ্লেক্স এবং এম্বিগুইয়াস এর সংক্ষিপ্ত রূপ, একটি অভিনব সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চলুন, তবে দেখে নেই ভুকা কীভাবে সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকিগুলো ব্যাখ্যা করে।
পরিবর্তন
পরিবর্তনই নতুন ধ্রুবক! যে ব্যবস্থাটি গতকাল পর্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ ছিল তা যে আগামীকালও থাকবে – এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। নিত্যনতুন ভাইরাস আর একেকবার একেক ধরণের ডিভাইস টার্গেট করা প্রমাণ করে যে সাইবার ওয়ার্ল্ডেও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলতে কিছু নেই! তিন ডব্লিউর দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার ব্যাবহারকারী কেলেংকারীর শিকার হচ্ছেন, অজস্র পরিচয় হাতবদল হচ্ছে অনলাইন শিকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে। সাইবার জগতের এই ভোলাটিলিটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট যে যেকোনো সময় পট পরিবর্তন হতে পারে। তার জন্য আপনি তৈরি তো?
অনিশ্চয়তা
একমাত্র অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কোনোকিছুই নিশ্চিত নয়! নিশ্চয়তা একটি ভ্রম মাত্র। ভবিষ্যতের খুব অল্পই অনুমানযোগ্য, তাই কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তাদের অবকাঠামোর ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারে না।
জটিলতা
প্রযুক্তিমাত্রই জটিল! সকালের ফ্লোরাইড টুথপেস্ট থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগের রিমোট কন্ট্রোলড টেলিভিশন – কোনোকিছুরই কৌশল/নির্মাণ সহজ নয়। অসংখ্য আন্তঃসম্পর্কীয় উপাদানের কারণে এসবের ত্রুটির কারণ ও ফলাফল সমন্বিত করাও তাই বেশ কষ্টসাধ্য। একইভাবে সাইবার নিরাপত্তার সাথে যেসব জটিলতার উদ্ভব হয় তা পরিচালনার দক্ষতা অর্জন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
দ্ব্যর্থতা
সবকিছুর সবশেষ কথা দ্ব্যর্থতা! যেকোনোকিছুই – হতে পারে, নাও হতে পারে, হয়তো, হয়তো না, যদি, কিন্তু, অথবা। এই দ্ব্যর্থতাই যেকোনো উদ্যোগ ব্যর্থ করতে পারে।
একটু সময় নিন; ভাবুন, সচেতন হোন
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি রূপান্তর ঘটানো ‘জিনিস’টি আর কিছুই না – ইন্টারনেট! কিন্তু, না জেনে ঘটে যাওয়া রূপান্তর অনেক মানুষ আর প্রতিষ্ঠানের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, আর পরিবর্তনের আগে একটু জিরিয়ে নিন। ক্লাউড নির্ভর হওয়ার আগে তা আপনার জন্য নিরাপদ কি না জেনে নিন, একান্ত কিছু বা ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে শেয়ারকে না বলুন, কর্পোরেট নেটওয়ার্কে পার্সোনাল ডিভাইস সংযুক্ত করবেন না, এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়মের মধ্যে থাকা অভ্যাস করুন। দেখবেন – দিনশেষে আপনি নিজে, আপনার ডিভাইস, ডিভাইসে সংরক্ষিত একান্ত, পারিবারিক আর প্রাতিষ্ঠানিক সবকিছুই নিরাপদ থাকবে।