বর্তমান যুগে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি চমৎকার পদ্ধতি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মত সার্ভিসের আগমনের ফলে আমরা একে অপরের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করি তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে এসব সুবিধা একইসাথে আপনার জন্য ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। কেননা প্রাথমিকভাবে এটি কল্যাণকর উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হলেও হ্যাকাররা এই প্ল্যাটফর্মে থাকা দূর্বলতার সুযোগে অনেকের গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধনের জন্য একটি নির্ধারিত বয়সসীমা থাকে। তবুও যে কারো পক্ষেই এসব নিয়মকে পাশ কাটিয়ে এতে নিবন্ধিত হওয়া সহজ ব্যাপার। আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের ফাঁদে ফেলা অপেক্ষাকৃত সহজ। তবে সম্মক বিষয়ে কিছু তথ্যাবলীই পারে আপনার অনলাইন প্রেজেন্সকে সুন্দর ও নিরাপদ করতে। চলুন দেখে নেয়া যাক এ সম্পর্কিত কয়েকটি টিপস
যে কোন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে তারা কী কী বিষয়ে নজর দেয়। এর সাথে সাথে ব্যবহারকারী হিসেবে নিজের দিক থেকেও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার সাথে কিছু অভ্যাসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন
আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা জরুরি। সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে, একইসাথে শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড কীভাবে নির্ধারণ করতে হয় তা জানাও জরুরী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্যবহারকারীর নাম, জন্মতারিখ, বাসার ঠিকানা বা এই ধরণের পাসওয়ার্ড সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। তাই এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। একইসাথে সবসময় মনে রাখা অসম্ভব এমন পাসওয়ার্ড তৈরি এবং ব্যবহার করতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ব্যবহারও দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ডেটা আজীবন, এমনকি আপনার মৃত্যুর পরেও ঠিক তেমনটিই থেকে যাবে, এর কোন ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই। তাই এমন কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে যার মাধ্যমে কোন সাইবার অপইরাধী আপনার ব্যক্তিগত জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এজন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার প্রাইভেসি সেটিংস সম্পর্কে আপডেটেড থাকা জরুরী। নিয়মিত এর পরিবর্তনও করতে হতে পারে। বেশিরভাগ সময়েই বুদ্ধিমানের কাজ হল শুধুমাত্র প্রিয়জনকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং আপনি যা পোস্ট করেন তা দেখার অনুমতি দিয়ে রাখা এবং নিজের তথ্যভান্ডার একটি গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।
যেহেতু প্রাইভেসি সেটিংসের মাধ্যমে আপনি আপনার স্পর্শকাতর তথ্য শুধুমাত্র বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছেন, তাই আপনার বন্ধুতালিকায় ঠিক কে কে জায়গা পাবে তাও সাবধানে ঠিক করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি অসংখ্য বন্ধুর অনুরোধ পাবেন। সতর্ক থাকুন কার অনুরোধটি আপনি গ্রহণ করেছেন সে সম্পর্কে। হ্যাকাররা আপনার সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে অ্যাক্সেস পাওয়া এবং আস্থা অর্জনের জন্য প্রায়শই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর এই কৌশলটি ব্যবহার করে।
এই অভ্যাসটি আমাদের মধ্য খুবই কম এবং এর কারণে অনেক বর বিপর্যয় ঘটতে পারে। আপনি যদি ঘনঘন নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টগুলিতে লগইন করতে মোবাইল ফোন বা অন্য কোনও হ্যান্ডহেল্ড গ্যাজেট ব্যবহার করেন তবে একইসাথে আপনার সেসব ডিভাইসে ব্যবহার শেষে লগ-আউট করে ফেলার অভ্যাসও গড়ে তুলুন।
পিসিতে আপনার পাসওয়ার্ড এবং লগইন ক্রেডেনশিয়াল সংরক্ষণ না রাখার চেষ্টা করুন। কেননা কোন কারণে যদি আপনার পিসি বা মোবাইল হ্যাক হয় আর তাতে পাসওয়ার্ড সেভ করা থাকে সেক্ষেত্রে যে কোন অ্যাকাউন্টতে ফ্রি অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে হ্যাকার। এরচেয়ে প্রতিবার লগইন করা এবং সেশনের পরে লগ আউট করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী।
যে কোন অ্যাপ্লিকেশনকে ব্যবহার করতে হলে সেগুলো মোবাইলের কিছুকিছু বিষয়ে অ্যাক্সেসের অনুমতি চাইবে। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ব্যবহারে এসব অ্যাক্সেস প্রদান করা যেমন জরুরী ঠিক তেমনি বুঝে শুনে শুধুমাত্র ট্রাস্টেড অ্যাপ্লিকেশনকেই এসব অ্যাক্সেস দেয়াটিও সমান জরুরী। যে কোন অ্যাক্সেস দেয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যেসব অ্যাপ্লিকেশনকে অনুমোদন দিচ্ছেন সেগুলো ট্রাস্টেড এবং অথিনটিকেটেড কী না। থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হ্যাকারদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় কৌশল।
ফিশিং এখনো হ্যাকারদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা। ফিশিং-এ১র মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ডেটা ব্রিচ বা লিক হয়ে থাকে। তাই অপরিচিত উৎস থেকে আগত এসএমএস, মেসেজ কিংবা মেইল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া যে কোন উৎস থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হলে অবশ্যই সেটি প্রদান করার আগে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। এধরণের অভ্যাস গড়ে তলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ কখন কোনদিক দিয়ে সাইবার আক্রমণ আসবে তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়।
আধুনিক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার সিস্টেমে প্রবেশকারী বেশিরভাগ ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করে, ফলশ্রুতিতে আপনার ব্যক্তিগত ডেটা থাকে সুরক্ষিত। আবার অ্যান্টি-স্প্যাম সিকিউরিটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত করে সিস্টেমে প্রবেশকারী সমস্ত অযাচিত ভাইরাস ফিল্টার করতে পারে। ফলে মর্ডান অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নিরাপদ রাখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থা। ইউজারদের তথ্য সংগ্রহ এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে টার্গেটেড অ্যাড দেখানোর মাধ্যমেই তাদের বেশিরভাগ আয় হয়। তাই আপনি যখন এ জাতীয় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন তখন আপনার তথ্য ওয়েবসাইটটির স্বত্বাধিকারীর প্রণয়নকৃত নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত। তাই যথাসম্ভব আপনার তথ্যর নিরাপত্তা আপানার নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে হ্যাকাররাও যথেষ্ট স্মার্ট। তারা জানে কীভাবে জাল অফার দিতে হবে এবং ঠিক কীভাবে অ্যাপ্রোচ করলে মানুষ তাদের পাতা ফাঁদে পা দিবে। এজন্য নিজের নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় হল এসম্পর্কে সম্মক জ্ঞান রাখা এবং প্রয়োজনে মর্ডান সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা।