কেবল এবং একমাত্র যথাযথ পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তার অভাবেই প্রতি বছর ‘হ্যাকড’ হয় ৬৩% অনলাইন অ্যাকাউন্ট! এরপরেও যারা পাসওয়ার্ডে 123456 ব্যবহার করবেন, তাঁদের কথা আলাদা – কিন্তু আপনি যদি চান নিজের অ্যাকাউন্টগুলি সুরক্ষিত রাখতে তবে এই পোস্ট আপনার জন্যই!
যে ডিভাইস, ইমেইল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াম ব্যবহার করেন না কেন পাসওয়ার্ডই তার প্রথম আবরণী। যেহেতু দৈনন্দিন যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যাংকিং, কেনাকাটা সবই এখন অনলাইননির্ভর তাই এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। অনলাইনে নিরাপদ ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো প্রয়োজনীয় ১০ টিপস:
১. পাসওয়ার্ড হোক নিজের মতো
ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স অথবা নিজের নাম ও জন্মতারিখ – এধরণের সহজ ও বহুল ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নিজের মতো করে এমন পাসওয়ার্ড সেট করুন যেন কেউ অনুমানও না করতে পারে।
২. পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
পাসওয়ার্ড নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন – সব ধরণের ডিভাইসে ব্যবহার উপযোগী এই অ্যাপ ব্যবহারে বারবার পাসওয়ার্ড টাইপ করতে হয় না। এছাড়াও, এটি সাহায্য করে সহজ কিন্তু অন্যদের জন্য অনুমান করা অসম্ভব এমন পাসওয়ার্ড সেট করতে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়শেষে এটি আপনাকে পাসওয়ার্ড বদলাতেও মনে করিয়ে দেবে।
৩. ভুলেও পাসওয়ার্ড কাউকে বলবেন/দেখাবেন না
যতই কাছের মানুষ হোক না কেন, ভুল করেও কোনো পাসওয়ার্ড কখনোই কাউকে বলা বা দেখানো উচিত নয়। আজ সম্পর্ক ভালো হলেও কাল কোনো কারণে তা খারাপ হলে কিংবা ওই ব্যক্তির অসেচতনতায় এটি যেকোনো সময় আপনার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৪. নির্ধারিত সময় পর পর পাসওয়ার্ড বদলান
অনলাইনে নিরাপদ থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় একটি নির্ধারিত সময় পর পর পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা। মনে রাখতে হবে নতুন পাসওয়ার্ডটি যেন কোনোভাবেই আগেরটির সাথে মিলে না যায় বা ক্রমিকও না হয় (যেমন: আগের পাসওয়ার্ড jackpot ছিল তো এবার দিলেন jackpot2 – এমনটা কখনোই করবেন না)।
৫. পাসওয়ার্ড হোক অন্তত ৮ অক্ষরের
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তায় এর আকার একটি অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। যতটুকু সম্ভব বড় (অন্তত আট অক্ষরের) পাসওয়ার্ড সেট করুন।
৬. পাসওয়ার্ড হবে বর্ণ, সংখ্যা ও চিহ্ন মিলিয়ে
একটি আদর্শ পাসওয়ার্ডে বর্ণ, সংখ্যা ও চিহ্ন – সবকিছুরই সমন্বয় থাকতে হবে। ডিকশনারিতে নেই এমন শব্দ নিয়ে বড় ও ছোট হাতের অক্ষরে ভেঙে তার সঙ্গে সংখ্যা ও চিহ্ন মিলিয়ে এমনভাবে সাজান যেন কেউ কোনোভাবেই অনুমান না করতে পারে। পাসওয়ার্ড কোথাও আলাদা করে লিখে বা সে’ভ করে রাখবেন না।
৭. পাসওয়ার্ড শক্তিশালী কি না লক্ষ্য রাখুন
বর্তমানে সব ধরণের আইডিতে পাসওয়ার্ড সেট করার সময় তা কতটুকু শক্তিশালী এটি পাসওয়ার্ডের পাশেই লাল-হলুদ-সবুজ রঙে দেখিয়ে দেয়া হয়। পাসওয়ার্ড সেট করার সময় তা লক্ষ্য করুন। সবুজ হলেই বুঝবেন পাসওয়ার্ড হিসাবে আপনি যা দিতে চাচ্ছেন তা পারফেক্ট!
৮. টুএফএ ব্যবহার
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি টুএফএ। এখন কম-বেশি সব সাইটই টুএফএ তথা টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সাপোর্ট করে – এটি ব্যবহারে কোনো আইডির জন্য পাসওয়ার্ড দেয়ার পর স্বনির্ধারিত মোবাইল বা অ্যাপে একটি তাৎক্ষণিক কোড আসবে। এই কোডটি পুনরায় পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেই কেবল লগইন করা যাবে। এতে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড কোনোভাবে জেনে গেলেও তা হ্যাক করতে পারবে না।
৯. একই পাসওয়ার্ড দুইবার না
দুই ধরণের আইডিতে একই পাসওয়ার্ড কিংবা আগে একবার ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড আবার নতুন করে সেট করা – অনলাইনে নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। একেক অ্যাকাউন্টের জন্য একেক রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। চিন্তার কিছু নেই, কৌশলী হোন – ধরুন, প্রথমে বড় ও ছোট হাতের মিলিয়ে ৩টি অক্ষর (a,B,c) নিয়ে তার সাথে দু’টি অংক (1,2) আর একটি চিহ্ন ($) যুক্ত করে ৬ অক্ষরের পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এবার যখন যে সাইটে এটা ব্যবহার করবেন তার প্রথম এবং শেষ অক্ষর যোগ করে দিন (যেমন গুগলে aBc12$ge আর ফেসবুকে aBc12$fk)! এতে সব সাইটে যেমন আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে তেমনি সেসব মনে রাখাও সহজ হবে।
১০. পাসওয়ার্ড কোথাও লিখে রাখবেন না
অনেকে মনে রাখতে পাসওয়ার্ড বিভিন্ন জায়গায় লিখে রাখেন – যা ভুলেও করবেন না!