২০১৭ সালে সর্বপ্রথম একটি ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস নজরে আসে সবার, এর নাম “জোকার”। অনেক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীই আবিষ্কার করেন যে, শুধু তাদের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য চুরি হয়ে গিয়েছে তাই নয়, তাদের অজান্তেই ক্রেডিট কার্ডে একটি বড় অংকের টাকা বিল হিসেবে এসে বসে আছে কিছু প্রিমিয়াম সার্ভিসের সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে। এই জোকার ভাইরাস গুগলের নজরে আসা মাত্রই তারা প্লে স্টোর থেকে সন্দেহজনক অ্যাপ সরিয়ে নিতে থাকে এবং ইউজারদের সাবধান করতে থাকে পরিস্থিতি নিরাপদ করার জন্য। তবে এই জোকার ভাইরাস বিভিন্ন ফাঁকফোকর বের করে ফিরে আসতে থাকে প্রতিনিয়ত অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে।
মাঝখানে বেশকিছুদিন এই জোকার ভাইরাসের খোজখবর ছিল না, যেন শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছিল সে! তবে এই বছর, গত আগস্টে হঠাৎ বেলজিয়াম পুলিশ ডিপার্টমেন্ট সবাইকে সতর্ক করে দেয় এই বলে যে, জোকার ভাইরাস ফিরে এসেছে। তারা ৮টি অ্যাপ্লিকেশনের লিস্টও দেয় যেগুলোতে নিশ্চিতভাবে এই ম্যালওয়্যার রয়েছে।
এরপর অতি সম্প্রতি একজন রাশিয়ান ম্যালওয়্যার অ্যানালিস্ট তার ব্যক্তিগত টুইটার প্রোফাইলে টুইট করে জানিয়ে দেন যে জোকার ভাইরাস আসলেই ফিরে এসেছে এবং বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশনের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত মোট ১৪টি অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া গিয়েছে যা নিশ্চিতভাবে এই ভাইরাসের সাথে সংযুক্ত। নিচে থাকা লিস্টে সেগুলোর নাম রয়েছে, দেখে নিন একনজরে।
সকল ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারই ভিন্ন ভিন্ন কারণে ক্ষতিকর কিন্তু এই জোকার ভাইরাস সত্যিকার অর্থেই গুগল তথা অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি ফিচারকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে সক্ষম। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব কিছু সিকিউরিটি ও কোয়ালিটি চেকিং ব্যবস্থা রয়েছে। জোকার নামের এই ম্যালওয়্যারটি সামান্য কিছু কোড বদল করার মাধ্যমে এই সিকিউরিটি চেককে বাইপাস করে অপারেটিং সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে।
একবার সিস্টেমে ঢুকে পড়তে পারলে অন্য সব অ্যাপের পিছে বসে থেকে এটি ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করতে পারে। কী ধরণের তথ্য? ব্যক্তিগত ডাটা, কন্টাক্ট লিস্ট, এমনকি এসএমএসও দেখে কিংবা মুছে ফেলার ক্ষমতা এর আছে। এরকম কোন আনঅথোরাইজড অ্যাপ দ্বারা এসএমএসের কন্ট্রোল নেয়াটা বিপদজনক কারণ এসএমএসের মাধ্যমে আসা যে কোন ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) এতে বেহাত হয়ে যেতে পারে।
জোকার ভাইরাস এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। যেহেতু সে ডিভাইসে আগে থেকেই ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাই ব্যবহারকারীর অজান্তেই এই ভাইরাস অনেক প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন কেনার রিকুয়েস্ট পাঠায়। আজকাল অনেকেই তার ক্রেডিট কার্ড ইনফো সেভ করে রাখেন মোবাইলে। এমন রিকুয়েস্ট পাঠালে একটি ওটিপি আসে মোবাইলে যেটি জোকার ভাইরাস ইউজারের অজান্তেই ব্যবহার করে ফেলে এবং মাসশেষে এক বিশাল বকেয়া বিলের সম্মুখীন হন ব্যবহারকারী। এসবের বাইরে গ্রাহকের অজান্তেই বিভিন্ন অ্যাডে ক্লিক করার মত কাজও করে জোকার ভাইরাস।
প্রথমেই চেক করুন উপরে থাকা লিস্টের কোন অযাপ আপনার মোবাইলে আছে কিনা, থাকলে কালবিলম্ব না করে তা ডিলিট করে দিন, মুছে ফেলুন এই অ্যাপের সংক্রান্ত সকল ডেটা। এরপর চেষ্টা করুন মোবাইল সিকিউরিটি সাপোর্ট আছে এমন একটি মর্ডান অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে পুরো মোবাইলের হেলথ চেক করতে। এছাড়াও খুবই মনোযোগ দিয়ে চেক করুন এমন কোন সার্ভিসে আপনার সাবস্ক্রিপশন করা আছে কী না যাতে মাসে মাসে টাকা কাটছে কিন্তু আপনি সেই সার্ভিসই ব্যবহার করছেন না। এমনটা হলে পরবর্তী সাইকেলের আগেই তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।
উপরে থাকা অ্যাপ্লিকেশনের লিস্টে বেশির ভাগ অ্যাপ্লিকেশনই অল্প কবার ডাউনলোড করা হলেও, কয়েটি আছে এমনকি ৫০ হাজারবার ডাউনলোড করা হয়েছে। তাই সাবধানে চেক করে নিতে হবে আপনার মোবাইলেও এটি আছে কী না। আবার প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে নেয়া হলেও, এসব ক্ষতিকর অ্যাপের এপিকে (APK)ফাইল কিন্তু ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল। তাই সাবধান থাকতে হবে ভুলেও যেন এগুলোকে ডাউনলোড না করা হয়।