একটি অনলাইন গেম – নাম ‘ব্লু হোয়েল’, বাংলায় ‘নীল তিমি’। ইতোমধ্যে চাউর হয়ে গেছে যে এই গেম খেলতে গিয়ে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছে! অবিশ্বাস্য হলেও, কেউ একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েক জায়গা থেকেও একই কথা শোনা গেছে। সত্য/মিথ্যা যাচাই সময়সাপেক্ষ, কিন্তু কেন এর নাম ব্লু হোয়েল? আর, কেনই বা এই গেম নিয়ে এতো মাতামাতি! চলুন তবে, জেনে নেই নীল তিমি সালতামামী।
খবরে প্রকাশ: ২০১৩ সালে রাশিয়ায় এই মরণখেলার সূচনা৷ আর, ব্লু হোয়েল খেলে আত্মহত্যার কথা প্রথম জানা যায় তার আরও দু’বছর পরে৷ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে আগে সমুদ্রের পানি ছেড়ে তীরে উঠে আসে৷ অনেকটা আত্মহত্যার মতোই এই ঘটনা ঘটে বলে এর থেকেই এই গেমের নাম ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমি রাখা হয়েছে বলে ধারণা৷
পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়- ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের সময়সীমা ৫০ দিন৷ নির্দেশ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীকে এই ৫০ দিনে ৫০টি ‘টাস্ক’ পালন করতে হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে আঘাত করাসহ নানারকম ভয়ানক ‘টাস্ক’৷ শেষ টাস্কটি আত্মহত্যা৷ অবশ্য, শুধু পালন করাই নয়, প্রতিটি ‘টাস্ক’ পালনশেষে ছবি কিংবা ভিডিও প্রমাণসহ তা কিউরেটরকে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানও দিতে হয়! এখন পর্যন্ত জানামতে ১৩০ জন এই গেম খেলতে গিয়ে আত্মহত্যার শিকার৷
গেমের শুরুর দিকের টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়৷ বরং বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই কিশোর-কিশোরীরা আকৃষ্ট হচ্ছে বলে মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা৷ প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা৷ তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি৷ কোনো পর্যায়ে খেলোয়াড়কে যেমন একা একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়৷ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে।
গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলি৷ প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহনন৷
ফিলিপ বুদেইকিন নামে সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করেছেন৷ বছর একুশের ওই রুশ যুবকের দাবি, যারা মানসিক অবসাদে ভোগেন, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তাদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার পথ বাতলাতেই এই গেমের ভাবনা! অবশ্য, ইতোমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশকে ফিলিপ বলেছেন, ‘‘সমাজকে পরিচ্ছন্ন করাই” নাকি তার উদ্দেশ্য!!
সর্বনাশা এই গেম বাংলাদেশে আছে কি না, বা এই গেম খেলে যারা আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে তা আদৌ সত্য কি না – তা এখনও জানা যায়নি। তবে, ব্লু হোয়েল না থাকলেও অনলাইনে থাকা হাজারো ফাঁদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। সন্তানদের অনলাইনে প্রভাবিত হওয়া বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে তাই সন্তান চোখের আড়ালে ইন্টারনেটে কী করছে এতে নজর রাখা উচিত।