ভাবিয়া করিও কাজ – মানুষ আগে বললেও কম্পিউটার আর ইন্টারনেট আসার পর বলে, ‘থিংক বিফোর ইউ ক্লিক!’ অর্থাৎ ক্লিক করার আগে ভেবে দেখ। প্রতিদিন কত শত ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন, এটা ওটা কত কিছু করছেন… কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এসব ওয়েবসাইটে গিয়ে যে ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড বা ব্যাংক ইনফরমেশন লিখছেন এসব আসলে কোথায় যায়? আর, কোনো কারণে জায়গামতো না গিয়ে ভুল ঠিকানায় গেলেই বা কী হতে পারে!ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার জো নেই। শিশুতোষ ছড়া কিংবা গবেষণার তথ্য সবই মিলে এখানে হাতের আঙ্গুলের স্পর্শেই। এছাড়াও ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন শপিং। প্রয়োজন যাই হোক, চাহিদামাফিক খুঁজে পেতে বা কেনাকাটা করতে ওয়েবসাইটে ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সময়েই প্রবেশ করাতে হয় নাম, ঠিকানা, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি। আর এসব তথ্য একান্ত ও স্পর্শকাতর বলেই জেনে রেখে উচিত আসলে এসব তথ্য কোথায় যায় বা বেহাত হলেই বা কী হতে পারে।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি ২০১৪-১৫ সালে এ ধরনের ৬২,০০০ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দেই: ঋতু (ছদ্মনাম) নাম্নী এক নারী হঠাৎ লক্ষ করলেন তাঁর অজ্ঞাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মাঝে মাঝেই টাকা ‘নাই’ হচ্ছে। অনলাইন শপিংয়ের এই যুগে এমনটি যে কারো বেলায়ই ঘটতে পারে, কিন্তু ঋতুর বিষয়টি ভিন্ন ছিল কেননা তিনি নিজেই একজন স্প্যামার ছিলেন! হ্যাকিংয়ের টুকিটাকি জানা থাকায় এটা অনুমান করা যায় যে যেমন তেমন পাসওয়ার্ড তিনি নিশ্চয়ই ব্যবহার করতেন না। তাহলে? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল কোনো একসময় ক্লিক করা একটি লিংক তাঁর পিসিতে প্রবেশকৃত যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দিত অন্য কারো কাছে।
আপনি যখন কোনো সাইটে তথ্য প্রবেশ করান, সংশ্লিষ্ট সাইট তা মিলিয়ে দেখে নিজেদের সার্ভারে রক্ষিত তথ্যের সাথে। আর, এই সুযোগটিই নেয় হ্যাকাররা।
অনিরাপদ ডিভাইস ব্যবহার করে আপনি যখন তাতে কোনো তথ্য প্রবেশ করান, কেউ না কেউ তা ঠিকই দেখে। সেখানে যদি স্পর্শকাতর কোনো তথ্য যেমন আপনার নাম, ঠিকানা বা ব্যাংকের তথ্য থাকে তখন সে তা টুকে নেয় ও পরে এর অপব্যবহার করে। এসব কারণেই প্রায়ই দেখা যায় যে কারো আইডি ব্যবহার করে অন্যদের বিভিন্ন রকম বার্তা পাঠানো হয় বা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেহাত হয়।
বিষয়টি আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় যদি আপনার প্রবেশকৃত তথ্য থেকে আপনাকে চিহ্নিত করতে বা আপনার সাথে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম সে খুঁজে বের করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই শোনা যায় ব্ল্যাকমেইলিং বা চাঁদাবাজি জাতীয় ঘটনা ঘটে থাকে।
চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনীর মতো যেহেতু হ্যাকারদের বুঝিয়ে বা অল্প কিছু দিয়ে পার পাওয়া যায় না, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হারানো তথ্য বা অ্যাকাউন্ট আর ফিরে পাওয়া যায় না বা ঘটে যায় বড় কোনো অঘটন।
প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে হুটহাট যে কোনো লিংকে ক্লিক না করার কথা বলা হলেও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার একটাই উপায়, তা হচ্ছে ভালো মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা ও তা নিয়মিত আপডেটেড রাখা।