‘রিস্ক’ নিতে এখন আর কেউই আগ্রহী নয়; না কোড ব্রেকার, না হ্যাকার! আধুনিক হ্যাকিং-এর বিস্ময় ‘জিরো ডে অ্যাটাকস’ যা কোনোরকম আশঙ্কা ছাড়াই শঙ্কা ডেকে আনে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য। এখন পর্যন্ত বিস্তারিত অপ্রকাশিত এই সফটওয়্যার প্রোগ্রাম শুধু সাধারণ অ্যাপ্লিকেশনই না বরং ডিভাইসে সংরক্ষিত তথ্যের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি সংযুক্ত নেটওয়ার্কেও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
যেকোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ঘাড়ের উপর নিঃশব্দে বসে থাকা এই ভাইরাসের এমন নামের কারণও এই যে আগে থেকে এর কোনো গতি-প্রকৃতি বা সম্ভাবনা অনুমান করা যায় না।
যেভাবে ছড়াতে পারে
জিরো ডে অ্যাটাকসের প্রাথমিক শিকার বড় বড় তথ্য-প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এমনকি অ্যাডবি’র মতো প্রতিষ্ঠানও এর হাতে নিরাপদ নয়! ২০১৫ সালে ছড়িয়ে পড়া অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছিল জিরো ডে অ্যাটাকসের আক্রমণেই। যার ফল শুধু অ্যাডবি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার কর্মীরাই নয়, বরং ভোগ করেছিল বিশ্বব্যাপী সকল অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ব্যবহারকারীরা!!
জিরো ডে অ্যাটাকারস বিস্তার লাভের জন্য মূলত দুই ধরণের ভেক্টর ব্যবহার করে থাকে, যথা:
- ওয়েবসাইট: যখন কোনো ভিজিটর ক্ষতিগ্রস্ত ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তাৎক্ষণিক তা ব্যবহারকারীর ব্রাউজারে বিস্তৃত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি অনলাইন পোর্টাল থেকে পাঠকের কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে ভাইরাস বিস্তৃতির পেছনেও দায়ী ছিল এই ভাইরাস।
- ভাইরাসবাহী ইমেইল: ব্যবহারকারীদের সরাসরি শিকার করতে এবং কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হয় ভাইরাসবাহী ইমেইল। ওই ইমেইলের অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করামাত্র তা নিয়ে যায় ক্ষতিগ্রস্ত ওয়েবসাইটে। আর সেখান থেকে উপরের নিয়মে ছড়িয়ে পড়ে জিরো ডে অ্যাটাকারস।
জিরো ডে অ্যাটাকারস থেকে সুরক্ষা
যেহেতু এই ভাইরাস সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই অনুমান করা যায় না, তাই এর থেকে সুরক্ষার বিষয়েও তেমন কোনো তথ্য এখনও জানা যায়নি। তবে নিরাপদ অনলাইন আচরণ জিরো ডে অ্যাটাকারস প্রতিহত করতে সাহায্য করবে, যথা:
- অপরিচিত আইডি থেকে আসা ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট কখনোই নিশ্চিত না হয়ে খুলবেন না। (এছাড়াও, যেকোনো ইমেইল খোলার আগে সেন্ডারের নামের উপর মাউস নিয়ে যান। ক্লিক করতে হবে না, কেবল মাউস নিয়ে গেলেই সেন্ডারের আসল নাম দেখতে পাবেন।)
- বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকাকালীন তাতে ভেসে আসা বিজ্ঞাপন, পপ-আপ বা বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করাই ভালো।
- যেকোনো ফাইল ডাউনলোডশেষে তা ওপেন করার আগে স্ক্যান করে নিন। স্ক্যান করার জন্য ডাউনলোডস ফোল্ডারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফাইলের উপর রাইট বাটন ক্লিক করে স্ক্যান উইথ … আপনার অ্যান্টিভাইরাসের নাম দেখতে পাবেন।
- অপারেটিং সিস্টেম তথা ওএস এবং নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন সব সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন হালনাগাদ করে রাখা। সামান্য কিছু এমবি বাঁচাতে অনেকেই উইন্ডোজ অটো আপডেট অফ করে রাখেন, যা যেকোনো সময় বড় কোনো বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- দেখে-শুনে যাচাই করে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। এটি আপনার কম্পিউটার ও স্মার্টফোন – উভয়ের জন্যই আবশ্যক। তবে, তাই বলে কখনোই ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন না, এসব ভালোর বদলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রিমিয়াম কোনো অ্যান্টিভাইরাসের আপনার সাধ্যমত ভার্সন ব্যবহার করুন, ক্ষতি নেই কিন্তু তা যেন অবশ্যই লাইসেন্সড ভার্সন হয়।