উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, বার্ষিক ১,২০০ অনলাইন ট্রানজেকশনের একটি এবং প্রতি ১০,০০০ অনলাইন ট্রানজেকশনকারীদের চারজনই ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির শিকার হন।
সময়ের সাথে একদিকে যেমন জীবন সহজ হচ্ছে, তেমন কঠিন হয়ে পড়ছে যাপনরীতি! দৈনন্দিন কেনাকাটা/লেনদেন সহজ করতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করছে কিন্তু কোনোভাবেই প্রতিহত করা যাচ্ছে না এসব কার্ডের অপব্যবহার। শুধু কার্ড চুরি যাওয়াই না, কার্ড ব্যবহারের তথ্যও চুরি হয় এখন!! কী, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই, হরহামেশা বাংলাদেশেও এখন এমনটা হচ্ছে।
জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের বেশকিছু গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ‘কম্প্রোমাইজ’ করে তখন বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। ২০১৫ সালে রীতিমত পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিড়িক পড়ে যায় এমন জালিয়াতির ঘটনার। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ টাকা জালিয়াতির ধাক্কায় এমন কোনো ঘটনা আর প্রকাশ্যে না এলেও সামাজিক মাধ্যমে দুয়েকবার গুঞ্জন শোনা যায় হ্যাকিংয়ের।
তাই, চলুন জেনে নেই কীভাবে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হয় আর তা থেকে নিরাপদে থাকার কৌশল:
নিরাপদ ব্রাউজিং
জানেন কি – ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি কখন ঘটে? কোনো একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে পছন্দসই পণ্য দেখে দাম পরিশোধের জন্য ‘পে নাও’ বাটন চাপামাত্রই আসলে সর্বনাশের শুরু হয়! তাই, যখন যেখান থেকেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন না কেন মনে রাখবেন সাইটের নামের শুরুতে যদি https:// না থেকে তবে তাৎক্ষণিক ওই সাইট ত্যাগ করুন। https:// থাকা মানে ওই সাইটটি নিরাপদ, কিন্তু যদি কেবল http:// থাকে তবে ওই সাইট থেকে কিছু না কেনাই ভালো।
পিন/পাসওয়ার্ড সেট করুন কঠিন দেখে
অনলাইনে কিছু কিনতে গেলে তো ব্যাংকের দেয়া সিকিউরিটি কী ‘পিন’ হিসেবে থাকেই, কিন্তু এটিএম থেকে টাকা তোলার সময় যে পিন দেয়া লাগে – তা নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন কী? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যাংকের দেয়া পিন কঠিন বলে অনেকে তা 1234 সেট করে থাকেন, যা কিনা সহজেই অনুমান ও জালিয়াতিযোগ্য! তাই, সবচেয়ে ভালো হয় যদি কার্ডের সঙ্গে দেয়া পিনটি মুখস্ত করে কাগজটি পুড়িয়ে ফেলেন, অথবা নিজে সেট করলেও একটু কঠিন দেখে একটি পিন সেট করুন।
গোপন তথ্য ভুলেও প্রকাশ করবেন না
জালিয়াতরা কিন্তু ব্যাংকের লোক সেজেও আপনাকে কল দিয়ে প্রতারিত করতে পারে। তাই, ব্যাংকের পরিচয় দিয়ে কেউ কখনো ফোন করে বা ইমেইলে যদি কখনো আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর, পিন বা যাচাই করন প্রশ্ন জানতে চায় – ভুলেও মুখ খুলবেন না! প্রয়োজনে আপনি সশরীরে ব্যাংকে গিয়ে দেখা করুন বা তাঁকে আসতে বলবেন আপনার কাছে। মনে রাখবেন, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কখনোই ফোনে বা ইমেইলে আপনার কাছে এসব তথ্য জানতে চাইবে না।
ওয়েব সিকিউরিটি টুল ব্যবহার করুন
মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার উভয়ের জন্যই ওয়েব সিকিউরিটি টুল বা এই টুল সংযুক্ত আছে এমন অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। এসব ক্ষেত্রে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে ওয়েব সিকিউরিটি টুল কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কার্ড হারানোর সাথে সাথে রিপোর্ট করুন
মনের ভুলেও যদি মনে হয় যে আপনার কার্ডটি হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাচ্ছেন না বা চুরি গেছে – দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যাংকের কার্ড তাঁদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে যোগাযোগ করুন। এখন সব ব্যাংকেরই ১৬২১৬ জাতীয় শর্টকোড আছে যেখানে যেকোনো নম্বর থেকেই কল করা যায়। আর, এসব কাস্টমার কেয়ার দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। তাই, আপনার ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার নম্বর জেনে মুখস্ত করে রাখুন এবং কোনো কারণে কার্ড না পেলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করুন।
কার্ড জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচাইতে বড় উপায় হচ্ছে সচেতনতা। টাকা তোলার জন্য যখন কোনো মেশিনে কার্ড দেবেন, আগে দেখে নিবেন বাড়তি কোনো যন্ত্র আবার তাতে সংযুক্ত নেই তো? কিংবা দোকানে গিয়ে কিছু কেনা বা অনলাইনে দাম পরিশোধের সময় টাকার পরিমাণ যাচাই করে নিবেন। পাশাপাশি, সবসময় নিরাপদ ও বহুল প্রচলিত ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করাটাই বুদ্ধিমানের।