কোন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না গ্রহণের পরেও যদি আপনার ক্ষুদ্র উদ্যোগটি এখনো সাইবার-আক্রমণের শিকার না হয়ে থাকে, নিশ্চিতভাবেই আপনি এখন পর্যন্ত ভাগ্যবানদের দলের একজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হয়নি বলে যে আসছে দিনগুলোতেও আপনি নিরাপদে থাকবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একটি সাইবার অ্যাটাকের ফলে আপনার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়, হয়ে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি। অর্থিক ক্ষতি অনেক সময়ই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হলেও ব্যাপারটি যদি হয় খারাপ রেপুটেশন, বেশিরভাগ সময়েই তা কাটিয়ে উঠা প্রায় অসম্ভব। আর কোন বিজনেস যদি সাইবার অ্যাটাকের সম্মুখীন হয় তবে নিঃসন্দেহে তার প্রভাব পড়ে ভাবমূর্তিতে। সাথে সাথে কোম্পানীর অর্থিক ক্ষতি তো থাকেই। এজন্যই সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ সম্পর্কে সচেতন থাকা, সুরক্ষার জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
এই লেখাটিতে এমনি ৪টি কার্যকর উপায় নিয়ে কথা বলা হয়েছে যা আপনার ক্ষুদ্র উদ্যোগটিকে সাইবারআক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আধুনিক কোন অ্যান্টিভাইরাস বা সাইবার সিকিউরিটি পণ্য বেশ ব্যয়বহুল। তবে একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করলে, সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস এবং র্যানসমওয়্যার অ্যাটাকের মত প্রচন্ড ক্ষতিকর সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধে অ্যান্টিভাইরাসের যে ভূমিকা তা দিয়ে খুব সহজেই এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়। যদিও কোন সংস্থারই উচিত না সম্পূর্ণরূপে সাইবারসিকিউরিটি সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল হওয়া, তবে যে কোন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, র্যান্সমওয়ার, অ্যাডওয়্যার, স্পাইওয়্যার এবং অন্যান্য ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা বলয় হিসেবে কাজ করে অ্যান্টিভাইরাসই। তাই অফিসের সব পিসিতে অ্যান্টিভাইরাস বা এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সাইবারসিকিউরিটির একটি অতিরিক্ত স্তর যুক্ত হচ্ছে। সাইবার আক্রমণ যে কোন সময় এবং যে কোন দিক থেকে আসতে পারে, তাই আপনার প্রতিষ্ঠানে একটি আধুনিক সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।
ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিকে অনতিবিলম্বে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের নীতি গ্রহণ করা উচিত। এটি সম্পূর্ণ বিনা খরচে, সবচেয়ে সহজ করা যায় এমন কাজগুলির মধ্যে একটি। একসময় 12345 বা abcd এর মতো দুর্বল পাসওয়ার্ডগুলি প্রতিষ্ঠান বা স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী, উভয়ের জন্যই গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু সময়ে সাথে সাথে এই অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে এবং দূর্বল পাসওয়ার্ড যুক্ত অ্যাকাউন্ট পড়েছে প্রচন্ড সাইবার ঝুকির মধ্যে। তাই একই পাসওয়ার্ড একাধিক স্থানে ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে ইংরেজি বড় হাতের – ছোট হাতের অক্ষর, বিশেষ চিহ্ন, গাণিতিক সংখ্যা ইত্যাদির সন্নিবেশ থাকে। শক্তিশালী এবং দীর্ঘতর পাসওয়ার্ডগুলি সাইবার অপরাধীদেরকে সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয় এবং আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখে। সাধারণ পাসওয়ার্ডের বাইরে বিজনেস পারপাসে অ্যাডমিন পাসওয়ার্ড নিয়ে মাঝেমধ্যেই এক বিশেষ সংকটের উদ্ভব হয়। এই পাসওয়ার্ড একাধিক স্থানে যদি শেয়ার করতেও হয় খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনের অধিক একজন এমপ্লয়িরও যেন এতে এক্সেস না থাকে।
নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এবং তথ্যের ব্যাক-আপই পারে সংগবদ্ধ সাইবার আক্রমণ থেকে আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসাকে রক্ষা করতে। সবরকম সবকিছু ঠিক থাকবার পরও সাইবার আক্রমণের নজির রয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে ডেটা ব্যাক আপ রাখার অভ্যাস, কোন কারণে এমন দূর্যোগ ঘটে গেলেও সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা উদ্ধার করার পথ খোলা রাখে। সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে ডেটা হারানো প্রতিরোধের একটি মূল উপায় এটি।
তাই আলাদা এবং নিরাপদ একটি স্থানে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এবং সংবেদনশীল ডেটা কপি করে ব্যাকআপ রাখুন। ব্যাকআপ সিস্টেমগুলি ঠিকভাবে কাজ করছে কী না তাও নিয়মিত পরীক্ষা করতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে একজন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের সহয়াতা নিন যিনি কতটা নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ নেয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করতে পারেন। আর বিশেষজ্ঞেরা ডেটা ব্যাক আপের সবচাইতে নিরাপদ স্থান হিসেবে বর্তমানে ক্লাউডকেই সাজেস্ট করেন।
সবশেষে যে বিষয়ে কথা না বললেই নয় তা হল সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান। সাইবার সুরক্ষার জন্য দরকারী অভ্যাসগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক পদক্ষেপ রাখা যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হতে পারে যে কোন সেমিনার, ওয়েবিনার বা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে কর্মীদেরকে নিয়মিত সাইবার থ্রেট সম্পর্কে আপডেটেড রাখা। এসব পদক্ষেপ উদ্যোগকে সাইবার-আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে কম খরচে কার্যকরী উপায়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা ব্রিচের পেছনে সবচেয়ে কমন কারণ হল প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই। কেননা বেশিরভাগ কর্মীই এ সম্পর্কে খুবই কম জানেন। এই অজ্ঞতাই কোনও সংগঠনকে সাইবার-আক্রমণের বিশাল ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। সুতরাং, একটি সংস্থার প্রত্যেকেই সচেতন হওয়া এবং সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের উদ্যোক্তা হন তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য সাইবার-আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলি অনুশীলনের সময় এসেছে। ক্ষুদ্র বা মাঝারী উদ্যোগের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে এই ছিল প্রধান ৪টি টিপস। আপনি যদি এমন কোন একটি ক্ষুদ্র বা মাঝারী ব্যবসার উদ্যোক্তা হন এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আপনার কোন উদ্যোগ বা প্রস্তুতি না থেকে থাকে তাহলে আর দেরী করা উচিত হবে না। এখনই এই ব্যাপারগুলো আপনার প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করুন। আর যে কোন জিজ্ঞাসার জন্য ভিজিট করুন www.reveantivirus.com