কমবেশি সব অফিসেই এখন হিসাবনিকাশ থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করা হয় ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে। কেবল কাজ নয়; প্রতিষ্ঠানের কর্মী তালিকা থেকে দিনের, মাসের এমনকি বছরের পর বছরের আয়-ব্যয়সহ সব তথ্যও এসব কম্পিউটারে ডিজিটাল ফাইল আকারে সংরক্ষিত থাকে। তাই পার্সোনাল কম্পিউটারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এসব কম্পিউটারের নিরাপত্তা। চলুন তবে দেখা নেয়া যাক অফিসিয়াল কম্পিউটার ও ডাটা নিরাপত্তায় কী করণীয়।
অফিসিয়াল কম্পিউটার ও তাতে সংরক্ষিত ডাটার নিরাপত্তায় সবার আগে প্রয়োজন কর্মীদের সচেতনতা। তাই, বছরে অন্তত একবার নতুন-পুরানো সহকর্মীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করুন সাইবার সিকিউরিটি ট্রেনিং। আপনার সহকর্মীদের জানান – তাঁদের কম্পিউটারে রক্ষিত ডাটা কতটা মূল্যবান এবং এসব ডাটা হ্যাক হলে তা কতটা মারাত্মক হতে পারে? সহকর্মীদের এটাও বুঝিয়ে বলুন যে এসব ডাটা কোনো কারণে হ্যাক হলে একদিকে যেমন অফিসের গোপনীয় তথ্য অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে তেমনি তাঁদের পারফরমেন্সও হতে পারে প্রশ্নের সম্মুখীন।
অফিসিয়াল ডকুমেন্ট আদানপ্রদান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ফাইলের ব্যাকআপ, চ্যাটিং, ব্যাংকিং সবই এখন অনলাইননির্ভর। আর, অসতর্ক পাসওয়ার্ড যেকোনো সময় অনলাইনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কমপক্ষে আট অক্ষরের দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন ইত্যাদির কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সমস্যা হোক বা না হোক, বছরে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। মনে রাখতে হবে ভিন্ন ভিন্ন আইডিতে একই পাসওয়ার্ড কিংবা আগে একবার ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড আবার নতুন করে সেট করা – অনলাইনে নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও, পাসওয়ার্ডে কোনো অবস্থাতেই নিজের বা প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা নামের অংশ, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর অথবা প্রিয় মানুষের নাম ইত্যাদি যুক্ত করবেন না।
কঠিন লাগছে? চিন্তার কিছু নেই, কৌশলী হোন – ধরুন, প্রথমে বড় ও ছোট হাতের মিলিয়ে ৩টি অক্ষর (a,B,c) নিয়ে তার সাথে দু’টি অংক (1,2) আর একটি চিহ্ন ($) যুক্ত করে ৬ অক্ষরের পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এবার যখন যে সাইটে এটা ব্যবহার করবেন তার প্রথম এবং শেষ অক্ষর যোগ করে দিন (যেমন গুগলে aBc12$ge আর ফেসবুকে aBc12$fk)! এতে সব সাইটে যেমন আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে তেমনি সেসব মনে রাখাও সহজ হবে।
বেশীরভাগ কোম্পানিই সাধারণত যোগাযোগের জন্য নিজস্ব ইমেইল ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, পাবলিক কিংবা অফিসিয়াল মেইল বক্স যেমনই হোক না কেন ফিশিং অ্যাটাক হতে পারে যেকোনো সময়ই। তাই, সহকর্মীদের জানান ফিশিং কী আর ফিশিং চেনার উপায়।
কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট – যে সময়ের জন্যই ডেস্ক ছেড়ে যান না কেন কম্পিউটার অবশ্যই লক করে উঠুন। কর্মক্ষেত্রে একই কথা মোবাইল ফোনের জন্যও প্রযোজ্য।
এক্সটার্নাল ডিভাইস দিয়ে ভাইরাস সাধারণত সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। তাই যেকোনো পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ড ডিস্ক কম্পিউটারে সংযুক্ত করার আগে অবশ্যই স্ক্যান করে নিতে হবে। অফিসের কম্পিউটার ও তাতে সংরক্ষিত ডাটার নিরাপত্তায় এই অভ্যাস নিজে চর্চা করুন ও সহকর্মীদের উৎসাহিত করুন।
উল্লিখিত সচেতনতার পাশাপাশি সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য অফিস ছোট কিংবা বড় যেমনই হোক না কেন প্রতিটি কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। একজন কর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ও সম্পদ রক্ষা যেমন আপনার দায়িত্ব, তেমনি কম্পিউটারে রক্ষিত ডাটা ও আপনার একান্ততার সুরক্ষার জন্য অফিসের কম্পিউটারে প্রিমিয়াম একটি অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া আপনার অধিকার। তাই, আপনার অফিসের পিসিতে যদি ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাসের লাইসেন্সড ভার্সন ইনস্টল করা না থাকে তবে অবশ্যই প্রশাসন বা মানব সম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করুন ও আপনার নিজের সুরক্ষার জন্য তা বুঝে নিন।