স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে সদ্য বুঝতে শেখা বাচ্চারাও এখন ‘ইউটিউব’ চিনে। বাবা-মায়েরা প্রথম প্রথম তাদের এটা-ওটা খুঁজে দিলেও শীগগিরই বাচ্চারা পছন্দমতো কন্টেন্ট খুঁজে নেয়া শিখে যায়। আর, এতেই শুরু বিপত্তির! কমবেশি সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন দেখানোর কিছু সাধারণ তরিকা রয়েছে, যেমন: এলাকাভিত্তিক, বয়সভিত্তিক আর কনটেন্টভিত্তিক। ফলে, চাহিদামাফিক নির্ধারিত এলাকার টার্গেট অডিয়েন্স বের করে নেয়া মার্কেটারদের জন্য সেকেন্ডের বিষয়।
সাথে বাচ্চাকে নিয়ে শপিং মলে গিয়েছেন। হুট করে বায়না ধরে বসলো- অমুক জিনিসটাই লাগবে! কীভাবে জানে এর কথা? টেলিভিশনের প্রতি আস্তে আস্তে বাচ্চারাও এখন আগ্রহ হারাচ্ছে, তার মানে হয়তো আর কাউকে দেখেছে কিংবা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখেছে। এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সহজ সমীকরণ – বাণিজ্য। শহরের শেষ মাথায় সদ্য চালু হওয়া চীনে রেস্তোরাঁ চেনা থেকে শুরু করে খেলনার দোকানে প্রবেশের আগেই অমুক খেলনা খুঁজে বেড়ানোর আসলে এই হচ্ছে সহজ রহস্য।
খাওয়া-দাওয়া, খেলনা, কার্টুন – এসবে বাবা-মায়েরা খুব একটা আপত্তি না করলেও যদি জানা যায় ছেলে স্কুল পালিয়ে ভিডিও গেমের দোকানে দিন কাটায়? কিংবা, মেয়ে তার বান্ধবীদের সঙ্গে কোনো সীসা বারে ‘হ্যাং আউটে’ যায়! শুনতেই অস্বস্তিদায়ক, এমনটা আমরাও প্রত্যাশা করি না। তারপরেও অনলাইন মার্কেটিংয়ের এই যুগে কোনো ভিডিও গেম প্লেস কিংবা হ্যাং আউট বারের বিজ্ঞাপন ভেসে আসতে কতক্ষণ?
দুশ্চিন্তার বলিরেখা ফুটিয়ে তোলা কিংবা অযথা মারধোর কোনো সমাধান নয়, প্রথমত ১৮ বছর বয়সের আগে সন্তানের হাতে কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ফোন তুলে দেয়া যাবে না। এমনকি, লুকিয়ে ব্যবহার করছে সন্দেহ হলেও তা খতিয়ে দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে শুরু করুন – সে যেন আপনাকেই সবচাইতে ভালো বন্ধু ভাবে। অফ কিংবা অনলাইনে আর কারা কার তার বন্ধু জানুন, তাদের খোঁজখবর রাখুন। অনলাইনে কেউ বিরক্ত করে কি না কিংবা বিশেষ কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কি না বুঝতে চেষ্টা করুন।
পাশাপাশি, বন্ধুসুলভ আলোচনায় সৎ থাকা, নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের কী বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না, অপরিচিত মানুষের সাথে কতটুকু মিশবে – এসবও ধারণা দিন। সর্বোপরি, নজর রাখুন সন্তানের অনলাইন পদচিহ্নে।
প্রযুক্তিকে অস্বীকার করার কিছু নেই। অনলাইনে মাউসের একটি ক্লিকে যেমন পড়াশোনার সবচাইতে ভালো রিসোর্স খুঁজে পাওয়া যায় তেমনি সার্চ না দিতেও অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চলে আসতে পারে পপ-আপ বিজ্ঞাপন হিসাবে। ভালো-মন্দের প্রভেদ ধরিয়ে দিয়ে তাই তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন – কতটুকু সে গ্রহণ করবে, আর কতটুকু বর্জন করবে। পাশাপাশি, সন্তানের এই বোধটুকু পুরোপুরি গড়ে ওঠা পর্যন্ত আড়াল থেকে তার অনলাইন পদচিহ্নে লক্ষ রাখুন।