পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস-২০১৭। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাধারণ ব্যবহারকারীদের সাইবার সচেতন করতে ২০১৫ সাল থেকে মাসটি উদযাপন করে আসছে রিভ অ্যান্টিভাইরাস। সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস উপলক্ষে পুরো অক্টোবরজুড়েই রিভ অ্যান্টিভাইরাস ব্লগ, কম্পিউটার সাময়িকী ও সংবাদপত্রে বিভিন্ন সচেতনতামূলক নিবন্ধ ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আসছে।
পাঁচ সপ্তাহে বিভক্ত এবারের সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের প্রথম সপ্তাহের স্লোগান ‘সিম্পল স্টেপস টু অনলাইন সেফটি’। চলুন তবে দেখে নেই অনলাইন নিরাপত্তার সহজ ধাপসমূহ কী কী:
অননুমেয় পাসওয়ার্ড: অনলাইন নিরাপত্তার প্রথম শর্ত
যে ধরণের কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন কিংবা যে মেইল সার্ভিস বা সোশ্যাল মিডিয়ামে সক্রিয় থাকুন না কেন – পাসওয়ার্ড হচ্ছে অনলাইন নিরাপত্তার প্রথম শর্ত। যেহেতু একান্ত তথ্য ও ছবি থেকে শুরু করে কেনাকাটা, ব্যাংকিং সবই এখন অনলাইননির্ভর তাই এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কমপক্ষে আট অক্ষরের দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন ইত্যাদির কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সমস্যা হোক বা না হোক, বছরে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। এছাড়াও, পাসওয়ার্ডে কোনো অবস্থাতেই নিজের বা প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা নামের অংশ, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর অথবা প্রিয় মানুষের নাম ইত্যাদি যুক্ত করবেন না।
ফেসবুক: পরিচিতদেরই শুধু ফ্রেন্ডস করুন
ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়ামে বন্ধুর সংখ্যা কতজন তা নিশ্চয়ই আপনার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হতে পারে না। তাই টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ বা আকর্ষণীয় চেহারা দেখলেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে হবে কিংবা বিপরীত লিঙ্গের কেউ এড করলেই একসেপ্ট করতে হবে – এমন কোনো কথা নেই। তাই ফেসবুক বা যে সোশ্যাল মিডিয়ামই ব্যবহার করেন না কেন, কেবল পরিচিতদেরই এড করুন।
টিএমআই: টু মাচ ইনফরমেশন
ইমেইল, ফেসবুক কিংবা অনলাইনে যে ধরণের প্রোফাইলই হোক না কেন অতিরিক্ত তথ্য দেয়া বিপদ ডেকে আনার মতোই। বাসার কিংবা অফিসের ঠিকানা, সন্তানরা কে কোথায় পড়াশোনা করছে কিংবা নিয়মিত যান এমন জায়গাসমূহের ঠিকানা অনলাইনে প্রকাশ না করাই ভালো। পাশাপাশি, কোথাও ঘুরতে গেলে কিংবা বাইরে খেতে গিয়ে ‘চেকইন’ দেয়াটা হালের ট্রেন্ড হলেও বেড়িয়ে এসে লোকেশন ট্যাগ করাই ভালো।
যতবার লগইন ততবার লগআউট
একান্ত প্রয়োজন না হলে নিজের কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোথাও থেকে মেইল, ফেসবুক ইত্যাদি অ্যাকাউন্টে সাইন ইন না করাই ভালো। তারপরেও কোনো কারণে বা বাইরে কোথাও গিয়ে জরুরী হলে সাইবার ক্যাফে বা অন্য কারো ডিভাইস থেকে লগইন করা হলে কাজশেষে অবশ্যই লগআউট করতে হবে।
ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল আলাদা ডিভাইস ও অ্যাকাউন্ট
সম্ভব হলে ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল কাজের জন্য আলাদা ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত। কোনো কারণে তা না পারলেও অবশ্যই আলাদা আলাদা আইডি ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, ব্যক্তিগত কাজ বা আপত্তিজনক সাইট ভিজিট অফিসে বসে করা অনুচিত।
ডাউনলোড: থামুন, ভাবুন ও পরীক্ষা করে নিন
কাজের কিংবা বিনোদনের জন্য সারাদিন অনেককিছুই ডাউনলোড করা লাগে। ডাউনলোড করাতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু কোথা থেকে তা নামাচ্ছেন – চেক করে নেয়া ভালো। বিশেষত যেকোনো সফটওয়্যার প্রয়োজন হলে থার্ড পার্টি থেকে ডাউনলোড না করে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করাই ভালো। এছাড়াও, অ্যাপ বা সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের সময় ‘আই এগ্রি’ টিক দেয়ার আগে অবশ্যই কী কী অনুমতি চাইছে তা পড়ে নেয়া উচিত।
সেফ ব্রাউজিং: নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার
ইন্টারনেটে যা কিছুই ব্রাউজ করেন না কেন অবশ্যই সেফ ব্রাউজিং ফিচার সমৃদ্ধ সাইবার সিকিউরিটি ব্যবহার করুন। এটি যেকোনো অনলাইন থ্রেট থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি কেউ যেন আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে আড়ি না পাততে পারে তা নিশ্চিত করবে।
সাইবার বুলিং: বাচ্চাদের সচেতন করার সময় এখনই
সাইবার বুলিং বা অনলাইনে কেউ হেনস্থা করলে কিংবা বাড়তি আবেগ দেখালে তা সংবরণ করতে বাচ্চাদের শেখানোর সময় এখনই। অনলাইনে কেবল পরিচিতদের সাথেই যোগাযোগ রাখতে হয়, অপরিচিত কেউ কোনো প্রস্তাব দিলে তা বাসায় জানানো এবং অনলাইনে কী কী করা যাবে না তা শিশুকে জানিয়ে দেয়া আপনারই দায়িত্ব। এতে যেমন বাচ্চারা বন্ধু-বান্ধব বা বাইরে থেকে ভুলয় শিক্ষা নিবে না তেমনি কেউ হেনস্থা করলেও নির্ভয়ে সবার আগে আপনাকে জানাবে যা তাকে ভবিষ্যৎ ট্রমা থেকে মুক্তি দেবে ও নিরাপদ অনলাইন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করবে।