24
Aug, 2016

cyberbullying

‘সাইবার বুলিং’ হচ্ছে অনলাইনে কোনো শিশুকে প্রলুব্ধ বা হেয় প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো ও মানসিক নির্যাতন করা। শুরুতে টিনএজাররাই কেবল এ ধরণের কাজে জড়িত থাকে ভেবে বুলিং সংজ্ঞায়িত করা হলেও পরে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে স্বনামে বা ফেইক আইডির আড়ালে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেও এ ধরণের হীন কাজে জড়িত থাকেন।

সাইবার বুলিং-এর ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটলেও ফোনে কিংবা ইমেইলেও অনেক সময় এ ধরণের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে।

সাইবার বুলিং-এর কোনো সূত্র পাওয়া গেলে বা এ ধরণের ঘটনা একবার ঘটলে বিকৃত ও অসুস্থ মানসিকতার আরও অনেকের কাছে ভিক্টিমের খোঁজ বা যোগাযোগের তথ্য চলে যায় বলে ধীরে ধীরে এর মাত্রা বাড়তেই থাকে। এর ক্রমঃবর্ধমান চাপে শিশুর মাঝে ডিপ্রেশন, পড়াশুনার প্রতি অনীহা, ইনসমনিয়া থেকে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে এ বিষয়ে বাবা-মায়ের ধারণা থাকা, সন্তান ইন্টারনেটে (কম্পিউটার এবং মোবাইলে) কী করছে তা জানা ও সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ সুসম্পর্ক রাখা উচিত।

সাইবার বুলিং কী?

শিশু/কিশোররা অনলাইনে যা দেখে তা বিশ্বাস করে। আবেগে কখনও কখনও ভুল সিদ্ধান্ত বা কাজও করে বসতে পারে। কিন্তু যখন তা ধরতে পেরে পিছপা হতে চায়, তখন বিপরীত পাশে থাকা অনলাইন বন্ধু কখনও তাকে লোভ দেখায়, কখনও বা ভয় দেখায় কিংবা মানসিক (সম্পর্ক অনলাইন থেকে অফলাইন অবধি গড়ালে শারীরিক অত্যাচারও হতে পারে) নির্যাতন করে তাকে কোনোকিছুতে বাধ্য করার চেষ্টা করে।

শিশুদের অনেকেই এসময় ভয় পেয়ে বা ‘চুপ করে থাকলে একসময় ঠিক হয়ে যাবে’ ভেবে মুখ খুলে না। আর, সাইবার বুলিং-এ জড়িতরা এর সুযোগ নেয় আরও বেশি করে। অন্যান্য সাইবার বুলারদের সাথে নিয়ে তারা ভিক্টিমকে আরও বেশি করে নির্যাতন করে।

সাইবার বুলিং-এর প্রভাব

সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৯% স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীই সাইবার বুলিং-এর নিয়মিত শিকার। এছাড়াও, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের দেয়া তথ্য মতে – দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীই সাইবার নিপীড়নের শিকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এঁদের মধ্যে মাত্র ২৬% অনলাইনে হেনস্তার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে অভিযোগ করেন, এবং অন্যরা সামাজিকতার ভয়ে গোপন রাখেন।

শুধু তাই নয়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশীয় শিশু-কিশোরদের হাতের নাগালে আসছে মাদক, অস্ত্র, আত্মহত্যা ও নিজেকে ঘৃণা করার যাবতীয় উপকরণ। মোবাইল ফোনে বিব্রতকর এসএমএস পাঠানো, অনলাইনে নিজের পরিচয় গোপন করা ও অনুপযুক্ত ছবি পোস্ট করা – এসবও সাইবার বুলিং।

সাইবার বুলিং-এর শিকার শিশুদের মাঝে ডিপ্রেশন, স্কুল/কলেজে না যাওয়ার প্রবণতা, ইনসমনিয়া এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। এখন পর্যন্ত একাধিক আত্মহত্যার ঘটনার মূল খুঁজতে গিয়ে অনলাইনে হেনস্তা হওয়া ও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সাইবার বুলিং প্রতিহতে করণীয়সমূহ

সাইবার বুলিং প্রতিহতে সবার আগে হতে হবে সন্তানের বন্ধু। সাইবার বুলিং কী, অপরিচিত বা অনলাইন বন্ধুরা কেন অনিরাপদ এবং তাদের সাথে কেন ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করা যাবে না – এসব সন্তানদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সম্ভব হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে হবে সন্তানদের সাথে, এবং সর্বোপরি নজর রাখতে হবে সন্তানের অনলাইন পদচিহ্নে।

সন্তান আপনার আড়ালে ইন্টারনেটে কী করছে, কোন কোন সাইট বেশি ব্রাউজ করে কিংবা সেসব সাইটে ভয়ঙ্কর কোনো ফাঁদ পাতা নেই তো – একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে এসব সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।

কেউ সাইবার বুলিং-এর শিকার হলে কখনোই চুপ করে থাকার কথা ভাববেন না, সরাসরি আইনের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, চুপ করে থাকলে সমস্যা কমবে না বরং অপরাধী আরও সাহস পেয়ে যাবে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আইনগত সহযোগিতা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হোন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আছে। আইন লঙ্ঘন করলে ১৪ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে। হয়রানির ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইন বা পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়ে থাকে।

হয়রানির শিকার যে কেউ সরাসরি বিটিআরসিতে যোগাযোগ করতে পারেন। বিটিআরসি ফোনে ও ইমেইলে দুইভাবেই অভিযোগ গ্রহণ করে থাকে। বিটিআরসির কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম এ ধরণের সমস্যায় সহায়তা করে থাকে। বিটিআরসিতে হয়রানির অভিযোগ জানাতে কল করতে পারেন (০২)৭১৬২২৭৭ নম্বরে বা ইমেইল পাঠাতে পারেন contact@csirt.gov.bd ঠিকানায়। এছাড়াও, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে ফোন করলেও গোপনীয়তা রক্ষা করে এ ধরণের সমস্যার সমাধান করা হয়।

The Author

Abhijeet Guha

Abhijeet is an active blogger with decent experience in the IT Security industry. He researches on various topics related to cyber security and pens down his research in the form of articles & blogs. You can reach him at abhijeet@reveantivirus.com.
Abhijeet Guha
  Leave a Comment
Search for: