ফেসবুক আর ইন্টারনেটের এই যুগে ভাইরাসের শিকার হননি এমন কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! ভাইরাসের কারণেই কাজের সময় প্রয়োজনীয় ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না, অপারেটিং সিস্টেমে হাজারো সমস্যা দেখা দেয়; এমনকি জীবন হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। কখনো নামে আবার কখনো আক্রমণের ধরণে ভিন্নতা থাকলেও বছরের পর বছর কম্পিউটার ও স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারকারীদের শত্রু এইসব ক্ষতিকর প্রোগ্রাম।
শুরুতে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ডিস্ক অন্য কোনো ডিভাইসের সংস্পর্শে এলে ভাইরাস ছড়ালেও ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ভাইরাস ছড়ানোর হারও। ইমেইল, এসএমএস, পপ-আপ ও ওয়েব লিংক – এখনও সবকিছুতেই ভাইরাস সংক্রমিত হয় বলে এখনকার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য এর ঝুঁকিও অনেক বেশি।
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার সেরা উপায় জেনে নেয়ার আগে চলুন দেখে নেই সর্বকালের সর্বনাশা ভাইরাসগুলি:
ম্যলিসা
এটি একেবারে শুরুর দিকের ভাইরাস। ম্যলিসা এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে ‘ওয়ার্ড ডকুমেন্ট’ থেকে বিস্তৃত হতো। মজার বিষয় এই যে উদ্ভাবক ডেভিড স্মিথ কর্তৃক এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছিল আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের জনৈক নর্তকি ‘ম্যলিসা’র নামে! ম্যলিসা ভাইরাসের বিশেষত্ব হচ্ছে ইমেইলের অ্যাটাচমেন্ট থেকে ফাইলটি ওপেন করা হলে এটি নিজে থেকে ব্যবহারকারীর প্রায় ৫০টি কন্টাক্টে একই মেইল ফরোয়ার্ড করে। সেসময় (১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে এর পরের কয়েক বছর) শুধুমাত্র এ কারণে ইমেইল চালাচালি বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি ইমেইল কোম্পানি।
আই লাভ ইউ
হুট করে মেইলে কোনো প্রেমপিয়াসী ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ভেবে ক্লিক করলেই সাড়ে সর্বনাশ ঘটাতো ‘আই লাভ ইউ’ ভাইরাস। ম্যলিসার মতোই ইমেইলে ছড়ানো এই ভাইরাসযুক্ত মেইলের সাবজেক্টের জায়গায়ও কেবল আই লাভ ইউ লেখা থাকতো। মুছে দিলেও পরে আবার নিজে থেকে প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম ভয়াবহ আই লাভ ইউ ভাইরাস ব্যবহৃত হতো রেজিস্ট্রি কী পরিবর্তন, ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ ও ইমেইলের অ্যাড্রেস বুকে থাকা কন্টাক্টে এই ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ছড়িয়ে দিতে। গুজম্যান নামে একজন ফিলিপিনো নাগরিককে এর উদ্ভাবক হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এই সাপেক্ষে তেমন কোনো নথি-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কোড রেড
উইন্ডোজ টুথাউজেন্ড ও উইন্ডোজ এনটিসহ মাইক্রোসফট আইআইএস ওয়েব সার্ভার ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগে ২০০১ সালে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস ‘কোড রেড’। তৎকালীন আই ডিজিটাল-এর দুই কর্মী কোড রেড মাউন্টেন ডিউ নামক কোমল পানীয় পানকালীন প্রথম এই ভাইরাসের শিকার হয়ে এই নাম দিলে পরে তাই স্বীকৃতি পেয়ে যায়! হার্ড ডিস্কে পদচিহ্ন রেখে গেলেও কোড রেড ভাইরাস মূলত আক্রমণ করে কম্পিউটারের মেমরিতে। একবার জায়গা করে নিতে পারলে নিজে থেকে হাজার হাজার প্রতিলিপি তৈরি করে সিস্টেম ফাইলের জায়গা দখল করে নেয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বিনষ্ট করাই এই ভাইরাসের কাজ!
স্যাশার
২০০৪ সালে উদ্ভাবিত স্যাশার নামক উইন্ডোজ ওয়্যার্ম আক্রমণ করা ডিভাইস স্লো করে দেয়ার জন্য ‘বিখ্যাত’! এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করে কাঙ্ক্ষিত ডিভাইস ক্র্যাশ করানো। লোকাল সিকিউরিটি অথরিটি সাবসিস্টেম সার্ভিস (এলএসএএসএস) এর বাফার ওভারফ্লো এর সুবিধা নেয়া স্যাশার ভাইরাসের আক্রমণে তখন এক মিলিয়নেরও বেশি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
কনফ্লিকার
ডাউনঅ্যাডাপ নামেও পরিচিত কনফ্লিকার ভাইরাস ২০০৮ সালে সনাক্ত করা হয়। ইংরেজি কনফিগার শব্দের আদল ও জার্মান প্রতিশব্দের সংমিশ্রণে নামকরণকৃত এই ভাইরাস তৎকালীন কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতায় নয় মিলিয়নের বেশি সিস্টেমে জায়গা করে নিয়েছিল। নিজেকে ‘বটনেট’ হিসেবে কনফিগার করতে পারা এই ভাইরাস ব্যবহার করে ভিক্টিমের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা দাবি করা হতো।
আপনার কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইসের কনফিগারেশন যেমন হোক না কেন, ভাইরাস ও ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে নিরাপদ থাকতে অবশ্যই অপারেটিং সিস্টেম ও প্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার ও অ্যাপ নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে এবং ভালো মানের প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা আবশ্যক।
চাইলে আপনিও ভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো অভিজ্ঞতা বা জিজ্ঞাসা নিচের কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন আমাদের সাথে।