যত বেশি সাইবার আক্রমণের সংবাদ সামনে আসছে সময়ের সাথে সাথে মানুষ ধীরে ধীরে সাইবারসিকিউরিটি সম্পর্কে ততই সচেতন হয়ে উঠছে। অনেকেই এখন বিভিন্ন সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। কোথায় বিনিয়োগ করলে প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে মানুষ এখন সেই প্রশ্ন করছে। কিন্তু অনেকসময়ই এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব না পাওয়ায় বিভিন্ন তথ্যের মিশ্রণে একটি বিভ্রান্তমূলক ধারণা তৈরি হচ্ছে গ্রাহকের মনে। স্পেশাল ফিচারের দিকে দেখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাসিক ফিচার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে অনেক সময়। এজন্যই জেনে রাখা উচিত কোন এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কোন কোন বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের জন্য এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যে ভুলগুলো হরহামেশাই হয় এমন ৯টির তালিকা করেছে রিভ অ্যান্টিভাইরাস বাংলাদেশ।
কোন একটি পণ্য সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা কে শেয়ার করতে পারবে? নিশ্চয়ই যিনি বা যারা ইতোমধ্যেই সেই পণ্যটি ব্যবহার করেছেন বা করছেন তারা? কিন্তু অনেকসময়ই দেখা যায়, এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন হিসেবে সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এই ইউজার রিভিউ এর বিষয়টিকে খুবই কম গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো হয়। যদি পুরাতন কিংবা বর্তমানে যে সকল গ্রাহক রয়েছে তাদের মতামতকে আমলে নেয়া যায়, বিভিন্ন রেটিং বা রিভিউ চেক করে দেখা যায়, তাহলেই অনেকটা ধারণা পাওয়া সম্ভব সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে। কোন পণ্য এবং পণ্য সরবরাহকারী সম্পর্কে মার্কেটে কেমন ধারণা রয়েছে তা সবসময়ই যাচাইবাছাই করে নেয়া উচিত।
কোন প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘস্থায়ীত্ব বেশিরভাগ সময়েই তার সফলতার নির্দেশক। হ্যা, কোন পণ্য অনেকদিন হল বাজারে থাকলেই যে তা ভালোমানের, এমন নিশ্চয়তা যে সবসময় আছে তা নয়.।তবে একবার ভাবুন, যদি কোন জিনিস ভালো মানেরই না হয় তাহলে কেন তা বছরের পর বছর ধরে বাজারে থাকবে? তাই কোন সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠান তার প্রস্তুতকরণ, বিক্রয় ও বিপণনের দায়িত্বে আছে, তার সম্পর্কে ভালোমতন খোঁজ না নেয়াটা বোকামি। অভিজ্ঞতা এমন একটি জিনিস যা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না, তাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সাইবার সিকিউরিটি সল্যুশন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
বেশিরভাগ পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রোডাক্ট বিক্রির পর সাপোর্ট তেমন দরকারী কিংবা কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু সাইবারসিকিউরিটি পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। কাস্টমার – ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপ এখানে শুরুই হয় ক্লায়েন্টএন্ডে সফটওয়্যার ইন্টলেশনের পর। প্রতি মুহূর্তেই দরকার পরে নানাবিধ সাপোর্ট এবং মোডিফিকেশন। তাই গ্রাহকসেবার ব্যাপারটি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহক সেবা বা আফতার সেলস সার্ভিস। যে ভেন্ডরের কাছ থেকে আপনি এন্ডপ্যেন্ট সিকিউরিটি কিনবেন, তারা কি এমন সাপোর্ট দিতে সক্ষম? কত দ্রুত এবং কতটা আন্তরিকভাবে তা করা হয়? তাদের সাপোর্টের প্রসেসটাই বা কেমন? চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে অবশ্যই এগুলো সম্পর্কে খোজখবর নিয়ে নিতে হবে।
সাইবার দুনিয়া প্রতিনিয়িত পরিবর্তনশীল। চোখের পলকে হয়ে যেতে পারে একটি সাইবার অ্যাটাক। এই সদা-পরিবর্তনশীল দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে একজন আইটি এডমিনকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। তার অধীনে থাকা সবগুলো কম্পিউটার (এন্ডপয়েন্ট) যেন রিস্ক-ফ্রি থাকে তা নিশ্চিত করতে দরকার রেগুলার সিকিউরিটি আপডেট প্যাচ। এই আপডেট প্যাচগুলো কত সহজে রোলআউট করা যায়, যে কোন এন্ডপয়েন্ট প্রটেকশন সফটওয়্যার ক্রয়ের আগে সেটিও মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে খেয়াল রাখা উচিত রিমোট ডিপ্লয়মেন্ট এবং আপডেটের সুযোগ রয়েছে কী না, সে বিষয়ে।
কোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসই এক একটি এন্ডপয়েন্ট। স্মার্টফোন, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, সার্ভার কিংবা আইওটি ডিভাইস, প্রতিটিই এন্ডপয়েন্টের উদাহরণ। প্রশ্ন হল, যে এন্ডপয়েন্ট প্রটেকশনটির সার্ভিস আপনি নিতে চাচ্ছেন, সেটি কি সবধরনের ডিভাইসে যুক্ত করা সম্ভব? নেটওয়ার্কের একটি সিঙ্গেল এন্ডপয়েন্ট যদি অরক্ষিত থাকে, তার মাধন্যেই গোতা নেটওয়ার্ক আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে পরিবর্তনগুলো সবধরনের এন্ডপয়েন্টে ঠিকভাবে ইন্ট্রিগ্রেট করা যাবে কী না সেদিকে লক্ষ্য না রাখা একটি বিরাট ভুল।
একটি সফটওয়্যারের অসংখ্য ফিচার থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রাহক হিসেবে সবগুলো ফিচারই যে আপনার দরকারী এমন নয়। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে জানতে হবে আপনার জন্য দরকারী যে ফিচার সেই ফিচারগুলো আছে কী না। সেলস প্রেজেন্টেশনের সময় একজন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ সব সময়ই চেষ্টা করবে তার প্রোডাক্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার। সেই চটকদার পরিবেশনায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজস্ব প্রয়োজন সম্পর্কে নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী ডিসিশন নিতে হবে।
সাইবার সিকিউরিটি সল্যুশনের বিভিন্ন রকমফের রয়েছে। একদিকে যেমন আছে ইপিপি বা এন্ডপয়েন্ট প্রটেকশন প্ল্যাটফর্ম, যা এন্ডপয়েন্টকে আক্রমণের শিকার হবার আগেই প্রতিহত করে, অন্যদিকে আছে এইডিআর বা এন্ডপয়েন্ট ডিটেকশন এন্ড রেসপন্স, যার আজ হল কোন কোন এন্ডপয়েন্ট আক্রান্ত হয়েছে তা খুঁজে বের করা এবং ক্ষতিকর সফটওয়্যার নির্মূল করা। অর্থ্যাৎ একটি হল প্রতিকার অন্যটি প্রতিরোধ। এর বাইরে আছে এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি যা লোকাল সার্ভারে রান করে, আছে এন্ডপয়েন্ট ক্লাউড যা একটি ক্লাউড-বেজড প্রটেকশন সিস্টেম। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ঠিক কোনটি প্রয়োজন তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা আবশ্যিক।
আমাদের অনেকের মাঝেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, ছোট কোম্পানিতে বোধহয় সাইবারএটাক হয় না, তাই ছোট প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাইবারসিকিউরিটির প্রয়োজন নেই। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা, কেননা সাইবার অপরাধীদের আক্রমণের তালিকার শীর্ষেই থাকে ছোটছোট প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই আপনার যদি কোন প্রতিষ্ঠান থাকে, অতিদ্রুত সেখানকার সাইবারসিকিউরিটি নিশ্চিত না করাটা হবে বিরাট ভুল।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাইবারসিকিউরিটি পণ্যের বাজারে যে অনেক অপশন আছে তেমন না, তবে শুধু মাত্র একটিই অপশন আছে তাও সত্যি নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনার অবশ্যই উচিত বাজারে থাকা একাধিক অপ্সহনের সবগুলোই খতিয়ে দেখা। রিভ অ্যান্টিভাইরাসের মত বিশ্বমানের এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডাররা বেশিরভাগ সময়েই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্রি-ডেমো অফার করে, যেন কোন গ্রাহক ফাইনাল ডিসিশন নেয়ার আগে পরখ করে দেখতে পারে। এমন সুযোগের পরেও সব অপশন এক্সপ্লোর করে না দেখাটা বড় ভুল।
আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য পারফেক্ট সাইবার সিকিউরিটি সল্যুশন খুঁজে বের করা একটি চ্যালেঞ্জিং টাস্ক। শুধুমাত্র সঠিক প্রশ্ন এবং তার উপযুক্ত উত্তরই পারে তাতে সফলতার দিক ন্ররদেশ করতে। আশা করা যায় আমাদের এই নির্দেশনাগুলো মেনে চললে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক সাইবার সিকিউরিটি পণ্যটি খুঁজে নিতে পারবেন।