মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় তোলা ছবি সংরক্ষণ, ইউটিউবে মুভি বা গান শোনা কিংবা ফেসবুক চ্যাটিং – ইন্টারনেট আর কম্পিউটার/স্মার্ট ফোন ছাড়া লাইফ এখন সত্যিই ইম্পসিবল! কিন্তু, নির্দোষ এসব কম্পিউটিং থেকেও অনেক সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। সেভ করে রাখা একান্ত কোনো ছবি/অনলাইন শপিংয়ের সময় দেয়া কার্ডের পিন ইত্যাদি অন্য কারও হাতে পড়া অথবা মোবাইল ফোনে নিজে থেকে নজরদারি করার অ্যাপ্লিকেশন সেট হওয়া – এসবের যেকোনো একটিই সারা জীবনের কান্নার জন্য যথেষ্ট!
তবে, এসব দুর্ঘটনা যে কেবল অন্য কেউ ঘটায় তা কিন্তু না। অনেকেই কখনো কখনো নিজেই নিজের শত্রু হয়ে যায়। গোলমেলে এই সাইবার জগতে নিজেকে নিজের শত্রু না করতে মানে ভুল করে ভুলের ফাঁদে পা না দিতে এখানে তুলে ধরা হলো সাধারণ কিছু করণীয় ও পরিত্যাজ্য।
কম্পিউটার অন করা থেকে শুরু করে ফেসবুকে লগইন – পাসওয়ার্ড সাধারণত নিজের নাম বা ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স দিয়েই অভ্যস্ত আমরা। নিরাপদ কম্পিউটিংয়ের জন্য সবার আগে এই অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত। কমপক্ষে আট অক্ষরের দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন ইত্যাদির কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সমস্যা হোক বা না হোক, বছরে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। এছাড়াও, পাসওয়ার্ডে কোনো অবস্থাতেই নিজের বা প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা নামের অংশ, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর অথবা প্রিয় মানুষের নাম ইত্যাদি যুক্ত করবেন না।
অনেকেই আছেন – কম্পিউটারে উইন্ডোজ তথা ওএস কিংবা মোবাইল ফোন কিনে সেটআপ করার সময়ই অটো-আপডেট বন্ধ করে রাখেন। সামান্য কিছু এমবি বাঁচাতে এই অটো-আপডেট বন্ধ করে রাখার প্রবণতা হিতে বিপরীত হতে পারে। এর ফলে ওএস এবং নিত্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার বা অ্যাপগুলো আপডেটেড না হওয়ায় ব্যবহারকারী নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। সাম্প্রতিক র্যানসমওয়্যার হামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যেসব ডিভাইসে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়া নিরাপত্তা প্যাচগুলো হালনাগাদ করা ছিল সেসব ডিভাইসই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই, যেকোনো ধরণের অনলাইন থ্রেট থেকে সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই কম্পিউটারের অটো-আপডেট ও ফোনের সিস্টেম অটো-আপডেট চালু রাখুন।
অনেকেই আছেন ফেসবুকে কিংবা মেইলে আসা সব লিংকেই ক্লিক করে ফেলেন হুটহাট! এতে যেকোনো সময়েই ফিশিংয়ের শিকার হতে পারেন। সাধারণত, ফেসবুক বা ইমেইলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর, সতর্ক বার্তা বা অবাক করার মতো সংবাদ, অফার কিংবা বিজ্ঞাপনের সাথের লিংকে ক্লিক করতে বলে জনপ্রিয় কোনো ওয়েবসাইটের লগইন পাতার মতো হুবহু পাতা সাজিয়ে তাতে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রবেশ করাতে বলাই ফিশিং। মাছ ধরার ক্ষেত্রে যেমন ‘টোপ’ দিয়ে শিকার করা হয় তেমনি এখানেও বিভিন্ন রকম লোভ দেখিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয় বলেই ইন্টারনেটে প্রতারণার এই কৌশলটির এমন নাম দেয়া হয়েছে।
অনেকেই আছেন কম্পিউটারে ‘তেমন কিছু’ করেন না বলে কোনো ধরণের অ্যান্টিভাইরাস বা নিরাপত্তা প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন না। আবার অনেকে ইন্টারনেট থেকে ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস নামিয়ে ব্যবহার করেন – দুটি অভ্যাসই ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। অ্যান্টিভাইরাস নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙ্গে পিসি’র তথা নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্যই তা ব্যবহার করুন।