প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে, যখন মানুষ কেনাকাটাসহ সবকিছুতেই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল, হ্যাকাররাও মানুষের অর্থ ও গোপনীয় তথ্য হাতাতে সারাক্ষণ অনলাইনে ওত পেতে থাকে। তাই, সচেতন হওয়া প্রয়োজন এখনই। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে এখানে তুলে ধরা হলো ১২টি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরামর্শ।
অনিরাপদ সাইট থেকে কিছু কিনবেন না
হ্যাকারদের বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল হচ্ছে চেনাজানা কোনো বড় কোম্পানির নামে নকল ওয়েবসাইট সাজিয়ে সেখান থেকে পণ্য কিনতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। তাই যে কোনো ওয়েবসাইট থেকে হুটহাট কেনাকাটা করা উচিত নয়। অনলাইন শপিংয়ের আগে যাচাই করে নিন এটিই উল্লিখিত কোম্পানির সাইট কি না? নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনোই কোথাও পেমেন্ট সংক্রান্ত ফর্ম পূরণ করবেন না।
ফ্রি/পাবলিক ওয়াইফাই থেকে কোনো অর্ডার না
ফ্রি বা পাবলিক ওয়াইফাইগুলো শুধু যে অনিরাপদ তাই না, বরং ডেকে আনতে পারে হুমকিও। তাই, এসব থেকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে অনলাইনে শপিং অর্ডার করা ঠিক না। শুধু তাই নয়, এ ধরনের সংযোগ ব্যবহার করে কোথাও ক্রেডিট কার্ড তথ্য বা অন্য কোনো গোপনীয় তথ্যও শেয়ার করা উচিত না।
ইন্টেলিজেন্ট ব্রাউজার সেটিংস
সাধারণত, ইন্টারনেট সার্ফিং করার জন্য আমরা ব্রাউজার যে অবস্থায় পাওয়া যায় বা ডাউনলোড করার পর ইনস্টল করলে যে ডিফল্ট সেটিংস থাকে সে অবস্থাতেই আমরা ব্যবহার করি। এভাবে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। এখনকার মোটামুটি সব ব্রাউজারই ইনটেলিজেন্ট ব্রাউজিং সেটিংসসমৃদ্ধ। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে তাই সংশ্লিষ্ট ব্রাউজারের সেটিংসে গিয়ে লোকেশন ট্র্যাকিং অফ করে দিন। পাশাপাশি, আপনি এখান থেকে ক্ষতিকর সাইট ব্লক, কুকি চালু বা বন্ধ ও অন্যান্য বিন্যাসও ঠিক করে নিতে পারেন।
ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল চালু
অনেকেই পিসি বা ল্যাপটপে ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল তথা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোনো কিছু পরিবর্তন করা হলে তার সতর্কতা দেখানো বন্ধ করে রাখে। এটা ক্ষতির কারণ হতে পারে যে কোনো সময়। ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল চালু থাকলে নিজে থেকে পিসিতে কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টল হতে চাইলে বা দুর থেকে কেউ আপনার ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আপনি তা জানতে পারবেন।
অপরিচিতের মেইলে এটাচমেন্ট?
অপরিচিত কারো আইডি থেকে আসা মেইলের এটাচমেন্ট ফাইল খুলে দেখার কথা ভাবছেন? ভুলেও না! হ্যাকারদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র মেইল এটাচমেন্ট। সাবধান! সব খোয়াবেন, টেরও পাবেন না। এছাড়াও পরিচিত মানুষের নামে মেইল এলেও খোলার আগে একবার সেন্ডারের নামে মাউস নিয়ে দেখুন ইমেইল ঠিকানাটাও একই ব্যক্তির কি না।
ফায়ারওয়াল – নিরাপত্তার বাল্যশিক্ষা
অনলাইন থ্রেট মোকাবেলায় কার্যকর উপায় ফায়ারওয়াল চালু রাখা। আপনি চাইলে উইন্ডোজের নিজস্ব ফায়ারওয়াল বা অন্য কোনো ফায়ারওয়ালও ব্যবহার করতে পারেন।
ফোন/কম্পিউটার লক করে উঠুন
প্রয়োজনে বা কাজের শেষে উঠতে গেলে অবশ্যই আপনার ডিভাইস লক করে উঠুন। খোলা ডিভাইস যে কারো হাতে পড়লে তথ্যচুরিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
ফ্রি সফটওয়্যারকে ‘না’ বলুন
ফ্রি সফটওয়্যার আর্থিক মূল্য না নিলেও পরে বড় মাশুল দিতে হয়। তাই, ফ্রি সফটওয়্যারকে না বলুন। একান্ত প্রয়োজনে লাগলেও বিশ্বস্ত সাইট থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করুন ও ডাউনলোডের সময় এর সঙ্গে আর কোনো জাংক সফটওয়্যার ডাউনলোড হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন।
নিয়মিত ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা
যেকোনো সময় ডাটা ডিজাস্টারের মুখোমুখি হলেও যেন ক্ষতি না হয় তাই ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ইউএসবি হার্ডডিস্ক কিংবা গুগল ড্রাইভে প্রয়োজনীয় ফাইলসমূহের আলাদা কপি রেখে দিন, এতে বিপদে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে হবে না।
অন্য ডিভাইসে কাজশেষে লগ আউট করা
নিজের ডিভাইস ছাড়া বাইরে থেকে বা অন্য কারো কম্পিউটার/মোবাইল ফোন থেকে মেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লগইন না করাই ভালো। একান্ত করতেই হলে কাজশেষে তাৎক্ষণিক লগআউট করতে ভুলবেন না।
ফাঁদে পা দিবেন না
অনলাইনে কিছু দেখা মানেই যে সত্য হবে এমন না। নিজের বুদ্ধি ও কমন সেন্স কাজে লাগান। পপ-আপ অ্যাড বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া লিংকে ক্লিক করার অভ্যাস কমানো ভালো। পাশাপাশি, সচেতন থাকতে হবে হুট করে পাওয়া খবর, বার্তা কিংবা বন্ধুত্বের আহ্বান থেকেও।
অ্যান্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই
আপনার যদি একটি পিসি বা মোবাইল থেকে থাকে, আর তা দিয়ে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন – তবে আপনার জন্য অ্যান্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই। বাজারে বিভিন্ন নামের ও দামের অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া গেলেও সবগুলোর কার্যকারিতা এক রকমের নয়। তাই দেখে-শুনে নিজের প্রয়োজনবুঝে যাচাই করে আপনার উপযোগী অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। তবে, শুধু অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করাই নয়, নিয়মিত আপডেট বা অটো-আপডেট চালু করে রাখতে হবে।