‘কী লগার’ তথা ব্যবহারকারীর অগোচরে লিখিত ইউজার নেম, পাসওয়ার্ডসহ তথ্য সংগ্রহ বহিঃবিশ্বে পুরানো হলেও বাংলাদেশে কী লগার আতঙ্ক নতুনই বলা চলে। এর কারণ মূলত: আমাদের অনেকেই অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নই। ধরুন, আপনি ফেসবুকে লগইন করার সময় আমি যদি আপনার ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দেখে মুখস্ত করে নেই- কেমন লাগবে! আদৌ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা পর্যন্ত আপনি কি শান্তিতে থাকবেন? কী লগার আসলে এই কাজটিই করে থাকে। ফেসবুক/ইমেইলসহ কম্পিউটারে যেখানেই আপনি যা কিছু লিখেন বা প্রকাশ করেন কী লগার তার সবকিছু সংগ্রহ করে হ্যাকারকে পাঠিয়ে দেয়।
জেনে অবাক হবেন, কিছু কিছু কী লগার শুধু কী-বোর্ড চেপে কী লিখছেন না লিখছেন তাই নয়, বরং ব্যবহারকারীর মাউস মুভমেন্ট পর্যন্ত বিশ্লেষণ ও সংগ্রহ করতে পারে।
কী লগার মূলত দুই ধরণের- হার্ডওয়্যার কী লগার ও সফটওয়্যার কী লগার
হার্ডওয়্যার কী লগার: হার্ডওয়্যার কী লগার হচ্ছে পেনড্রাইভ বা পেন্সিল ব্যাটারির মতো দেখতে এক ধরণের ইউএসবি ডিভাইস, যা টার্গেটের কম্পিউটারে ইনস্টলড করে দেয়ার পর থেকে সেই কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত হতে থাকে। সাধারণত, সাইবার ক্যাফে বা টার্গেট যদি হাতের নাগালে থাকে, তবে তার তথ্য সংগ্রহ করার কাজে এই হার্ডওয়্যার কী লগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সফটওয়্যার কী লগার: কম্পিউটারে কোনোরকম কারসাজি ব্যতীত দূর থেকে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য হ্যাকাররা সফটওয়্যার কী লগার ব্যবহার করে থাকে। এটি সাধারণত প্রলোভন দেখানো মেইলের সঙ্গে অ্যাটাচমেন্ট আকারে বা বিশেষ কোনো অফারের লিংকে ক্লিক করিয়ে অথবা অন্য কোনো সফটওয়্যারের সঙ্গে টার্গেটকে দিয়ে ডাউনলোড করিয়ে নেয়া হয়। এসব ম্যালওয়্যার বা রুটকিট একবার ক্লিক করা হলে নিজে থেকে ডাউনলোডেড হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে সেট হয়ে যায়।
কী লগার থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সাইবার ক্যাফে বাইরে কোথাও কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় তাই অতিরিক্ত কোনো ডিভাইস তাতে সংযুক্ত আছে কি না তা চেক করে নেয়া উচিত। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত কম্পিউটারেও মাঝে মাঝে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে আনইনস্টল প্রোগ্রাম অপশনে গিয়ে অপরিচিত কোনো অ্যাপ আছে কি না যাচাই করে দেখা ও থাকলে তা মুছে ফেলা উচিত। তবে, কী লগার প্রতিহত করতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে অ্যান্টি-কী লগার সমৃদ্ধ ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করা। এছাড়াও, কী লগিং থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে ও কীভাবে হ্যাকাররা এসময় ভিক্টিমের উপর নজরদারি করে, জানতে ম্যান-ইন-দ্যা-মিডল অ্যাটাক! পড়ে দেখতে পারেন।