বর্তমান সময়ে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখা যেমন দুরূহ ঠিক তেমনি বোকামিও বটে। অনেকে অবশ্য তার বদলে ব্যবহারের স্বাধীনতা দিয়ে নজরদারি করার কথা ভাবেন! সচেতন এবং আধুনিক অভিভাবকদের এই ভাবনা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার, কিন্তু দিনে কতবার ছেলে বা মেয়ের ঘরে উঁকি মেরে দেখবেন? আর, যারা চাকরি বা ব্যবসা করছেন – তাঁদের ক্ষেত্রে তো তাহলে সব ছেড়ে বাসায় বসে থাকা কোনো উপায় নেই!
শুধু তাই নয়, বাচ্চারাও এখন আর পিছিয়ে নেই। বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েরাই লুকোচুরি করে তাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে। তারাও জানে অনলাইনে যা দেখছে বা করছে তা বাবা-মা ভালোভাবে নেবেন না তাইতো মুছে ফেলে সবই! সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে ৭০% বাবা-মাই জানেন না যে সন্তান তাঁদের অগোচরে অনলাইনে ভায়োলেন্ট ও পর্ন জাতীয় বিষয়াদি দেখে থাকেন। এখানেই শেষ নয়, ভয়ংকর হলেও সত্যি যে আর এসবের জেরেই সেসব বাচ্চাদের অনেকেই সাইবার বুলিং, ইমেইল হ্যাকিংসহ অপরিচিতদের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
এমন একটি বা দুটি নয়, অসংখ্য ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও। আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে তাই এমন কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আগেই প্রয়োজন সচেতন হওয়া।
একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে হয়তো তার কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহার হুট করে বন্ধ করে দেয়াটা উচিত হবে না কেননা আপনাকে না জানিয়েই বন্ধু-বান্ধব কিংবা সাইবার ক্যাফেমুখী হতে পারে। তাই, তার সাথে কথা বলুন। কম্পিউটার কেন আর অনলাইনেই বা তার করণীয় কী – সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কী, কেন ও কাদের সাথে কীভাবে কথা বা যোগাযোগের জন্য তাও তাকে জানিয়ে দিন। পাশপাশি, নিজেও সচেতন থাকুন সন্তানের জন্য নিরাপদ অনলাইন নিশ্চিত করতে।
আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপডেটেড তো?
সচরাচর আমরা এভাবেই অভ্যস্ত যে পিসিতে উইন্ডোজ বা অন্য অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করেই অটোম্যাটিক আপডেট ‘অফ’ করে রাখতে হয়। কখনোই এমনটি করা উচিত নয়। কেবলমাত্র প্রথমবার বড় আকারের মেগাবাইট লাগলেও এরপর এতে খুব অল্পই এমবি খরচ হয়। তাই, সামান্য কিছু মেগাবাইট বাঁচাতে গিয়ে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন না। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন সব সফটওয়্যারও নিয়মিত হালনাগাদ করা উচিত।
৩ মাস অন্তর পাসওয়ার্ড বদলান
নিয়মিত তিন মাস অন্তর পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা হলে এবং একই পাসওয়ার্ড আবার ব্যবহার না করা হলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি। শুধু তাই নয়, পাসওয়ার্ড এমন হতে হবে যেন কেউ সহজে তা অনুমান করতে না পারে, ডিকশনারির কোনো শব্দ না হয় এবং আপনার বা নিকট কারো নাম, জন্ম তারিখ বা ফোন নম্বরের সাথে মিলে না যায়।
ইমেইলের নিরাপত্তায় জোর দিন
অনেকেই ফেসবুক বা অন্য কোথাও আইডি খোলার জন্য ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুললেও এর নিরাপত্তায় উদাসীন থাকেন, এমনকি কেউ কেউ ভুলেই যান যে আদৌ কী পাসওয়ার্ড ছিল ইমেইলের। এটা কখনোই করা উচিত নয়, কেননা অন্য কোনো আইডি বেহাত হলেও তা ফিরে পাওয়ার জন্য ইমেইল হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম। তাই, আপনার ইমেইলের নিরাপত্তায় অবশ্যই টুএফএ (লগইন করার সময় ফোনে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড আসবে, যা ছাড়া লগইন করা যাবে না)।
নকল ওয়েবসাইট থেকে সাবধান!
নকল ও অনুপযোগী ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন। কোনো সাইটে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্রাউজার থেকে ‘সতর্কতা’ দেখালে ‘অন মাই রিস্ক’ দিয়ে প্রবেশ করবেন না।
সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে চোখ-কান খোলা রাখুন
অনলাইন জগতে বিচরণের পাশাপাশি এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকেও চোখ-কান খোলা রাখা উচিত। এজন্য অন্তত গুগল নিউজ অ্যালার্টে ‘অনলাইন নিরাপত্তা’ দিয়ে সতর্কবার্তা সেট করে রাখা যেতে পারে।