মিথ মানে প্রচলিত কথা; কেউ হয়তো কারো কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি আবার অন্য কারো কাছ থেকে শুনেছেন। লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে একসময় প্রায় সবার মুখে শোনা গেলেও সত্যতা আর যাচাই করা হয় না। গণনার জন্য কম্পিউটারের আবিষ্কার হলেও ক্রমে ক্রমে সবকিছুতেই আনা হয় এর সংশ্লিষ্টতা। প্রোগ্রামাররাও কাজের সফটওয়্যার বানাতে বানাতে এক সময় আপাতঃদৃষ্টিতে কাজের না হলেও দূর থেকে অন্য কারো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন প্রোগ্রাম তৈরি করলেন। আবার, সেইসব ক্ষতিকর প্রোগ্রাম প্রতিহত করতে তৈরি হয় অ্যান্টিভাইরাস। কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাসের ব্যবহার সংক্রান্ত মিথের কয়েকটি নিয়েই আমাদের এবারের পোস্ট:
মিথ ১: অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করলেই পিসি ‘স্লো’ হয়ে যায়
উপমহাদেশীয় বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারীই এই ধারণা বদ্ধমূলে বিশ্বাস করেন যে পিসিতে অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করলে তা স্লো হয়ে যায়। এর পেছনে কারণ মূলত ৩টি – প্রথমত, পাইরেটেড বা ক্র্যাকড অ্যান্টিভাইরাস (অনলাইনে ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ডাউনলোড করে ফেক সিরিয়াল কী জেনারেটর বা ক্র্যাক দিয়ে অ্যাক্টিভেটেড করা) ব্যবহার করলে পিসি স্লো হবেই। দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিভাইরাসের সিস্টেম ফাইল (ইনস্টল করার পর তা মেমরির কতটুকু জায়গা দখল করে) ভারী বা বেশি এমবির হলে তাও পিসি স্লো করবে এবং তৃতীয়ত, উন্নত দেশের মানুষের মতো এখানে সবার কম্পিউটার আধুনিক কনফিগারেশনের নয়। পাশাপাশি, রিকন্ডিশনড গাড়ির মতো বাইরের দেশের ব্যবহৃত কম্পিউটার/ল্যাপটপ দেশে নতুন ডিভাইস ও অ্যাকসেসরিজের সাথে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে বলে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত স্পিড পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে, রিভ অ্যান্টিভাইরাসের কোনো ক্র্যাকড ভার্সন নেই, কেউ চাইলে লাইসেন্সড ভার্সন ক্রয় করার আগে লাইসেন্সের সব সুবিধাসহ ৩০-দিন ফ্রি ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন। ইনস্টল করার পর রিভ অ্যান্টিভাইরাস অনধিক মাত্র ১০০ এমবি জায়গা নেয় বলে সিস্টেমের উপর কোনো বাড়তি চাপ পড়ে না, ফলে পিসিও স্লো হয় না। এছাড়াও, টার্বো স্ক্যানিং ইঞ্জিন সমৃদ্ধ হওয়ায় রিভ অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারে স্ক্যানিংয়ের সময়ও পিসিতে সব কাজ করা যায় সাবলীলভাবে।
মিথ ২: অ্যান্টিভাইরাস কোনো কাজ করে না
ধরা যাক, আপনার বাড়িতে একজন নিরাপত্তা কর্মী আছেন যিনি সার্বক্ষণিক পাহারা দেন, শাদা চোখে দেখলে বেশিরভাগ সময় গেটে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তাঁর তেমন কাজ নেই! কিন্তু, যখন অনাহূত কেউ প্রবেশ করতে চায় কিংবা চুরি/ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে – তখন? অ্যান্টিভাইরাসও তেমনি। নিরাপত্তা প্রোগ্রামসমূহের মূল কাজ হচ্ছে আপনার সিস্টেমের উপর নজর রাখা ও যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম রান হওয়া প্রতিহত করতে নিয়মিত আপডেটের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি রাখা।
নিয়মিত কাজের বাইরেও সর্বাধুনিক নিরাপত্তা প্রোগ্রাম হিসাবে রিভ অ্যান্টিভাইরাস আরও দিচ্ছে ঘরে/বাইরে যেকোনো জায়গা থেকে ডিভাইসের নিরাপত্তা ও অনলাইন গতিবিধি মনিটরের ব্যবস্থা, উন্নত পিসি টিউন-আপ ও সেফ ব্রাউজিংসহ অনেক বাড়তি সুবিধা!
মিথ ৩: ফ্রি এবং পেইড অ্যান্টিভাইরাসে আসলে সমান সুবিধা
নিজে থেকে এসে কেউ ফ্রি তে আপনার বাড়ি পাহারা দেয়ার দায়িত্ব চাইলে আপনি কি মাসিক বেটনও আর থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে রাখা দারওয়ান বাদ দিয়ে ফ্রি জনের হাতে ঘরের চাবি তুলে দিবেন? বেসিক স্ক্যানিং করলেও ফ্রি ডাউনলোড করা অ্যান্টিভাইরাসসমূহ রুটকিট, স্পাইওয়্যার বা হ্যাকারদের আক্রমণ ঠেকাতে পারে না। এছাড়াও নিত্যনতুন সংক্রামিত কম্পিউটার ভাইরাস ও কি-লগারসহ বিভিন্ন অনলাইন থ্রেট ঠেকাতে চাই উন্নত স্ক্যান ইঞ্জিন, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ইত্যাদি আধুনিক নিরাপত্তা সেবা। শুধু তাই নয়, একজন ব্যবহারকারী হিসেবে দিন-রাত যেকোনো সময় কারিগরি সমস্যা বা ব্যবহারবিধি বিষয়ক জিজ্ঞাসা মেটাতেও এসব ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসের কোনো সাপোর্ট সেবা নেই।
সার্বিক দিক বিবেচনায় কেবল নিজের একার নিরাপত্তাই নয় যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে যেহেতু পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত তাই দেখে-শুনে যাচাই করে প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস দেখেই ব্যবহার করা উচিত।
মিথ ৪: একসাথে ২টি অ্যান্টিভাইরাস মানে ডাবল প্রোটেকশন
না, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। কোনো ডিভাইসে একই সময়ে দুই বা তিনটি অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টলড করা থাকলে প্রথমত সিস্টেম অনেক ভারী হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়ত একই সাথে কাজ শুরু করলে পিসি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ফ্রি বা ক্র্যাকড অ্যান্টিভাইরাস একটি ইনস্টলড করা থাকলেও যেমন পিসির জন্য ক্ষতিকর, তেমনি একই সময়ে একাধিক লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাসও সমান ক্ষতিকর। তাই, পিসিতে একাধিক নয় কেবল একটিই অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন এবং অবশ্যই নতুন অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টলেশনের আগে পিসিতে অন্য কোনো অ্যান্টিভাইরাস বা তার কোনো ফাইল আছে কি না তা দেখা এবং থাকলে মুছে ফেলে রিস্টার্ট দিয়ে নেয়া উচিত।