“মহামারী”, “করোনভাইরাস”, “কোভিড -১৯”, সাম্প্রতিক সময়ে, অনলাইন এবং অফলাইন খুব সম্ভবত সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ এগুলোই। আমাদের বিশ্ব একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় প্রতিটি দেশই ঐক্যবদ্ধ। এরই সাথে সাথে শুরু হয়েছে একটি নতুন ট্রেন্ডও, অফিসে নয় বরং বাসায় বসেই কাজ করা কিংবা “ওয়ার্ক ফ্রম হোম”-এ শিফট করছে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অতীতে কিছু প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করলেও, বর্তমানে অনেক বড় পরিসরে এই রিমোট ওয়ার্কের শুরুটা হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি ৩টি কোম্পানির মধ্যে ১ টি কোম্পানি তাদের কাজের শতকরা ৮০ থেকে ১০০%-ই রিমোট ওয়ার্ক হিসেবে বাসা থেকেই সম্পাদন করছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাড়িতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তবে অফিস থেকে কাজকর্ম সরে যাওয়ায় সুবিধার পাশাপাশি মুদ্রার অপর পিঠও দেখতে হচ্ছে ইদানীং। একটি সেন্ট্রালাইজড সিস্টেমে (অন্য কথায়, অফিসে) সমস্ত কর্মচারীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা এবং যে কোনও ধরণের সাইবার আক্রমণ থেকে সকল কম্পিউটারকে নিরাপদ রাখা তুলনামূলক সহজ। অফিস থেকে কাজ করা বন্ধ হয়ে বাসা থেকে কাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে আইটি প্রফেশনালদের জন্য তাদের সহকর্মীর পিসিগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রায় দুঃস্বপ্নের নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তখন কম্পিউটারগুলো আর একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের আন্ডারে নেই বরং চারদিকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয় যখন গবেষকরা দেখতে পান যে প্রায় ৬৮% প্রতিষ্ঠান, অফিশিয়াল কাজে ব্যবহারের ডিভাইসগুলোর জন্য নতুন এবং আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করেনি।
আর অপরাধ সংগঠনের জন্য ঠিক এমন কিছু সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকে দুষ্কৃতিকারীরা। অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে স্ক্যামার বা হ্যাকারেরা হাতিয়ে নিতে পারে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি বা তথ্য।
আজ হোম অফিসই যে নতুন যুগের সলুশ্যন তা স্পষ্ট। সাথে সাথে এও নিশ্চিত যে সাইবার সুরক্ষা আজ অপরিহার্য, আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিক প্রশ্নটি হল যে সমস্ত পিসি অফিসের নেটওয়ার্কের সাথে বাইরে থেকে সংযুক্ত রয়েছে তা কি যথেষ্ট নিরাপদ? যদি তা না হয় তবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
এই লেখাটি বাসা থেকে কিংবা অফিসের বাইরে থেকে অফিসের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থেকে কাজ করা প্রত্যেকের জন্যই অনলাইন সাইবার সুরক্ষা বাড়ানো সম্পর্কে কয়েকটি টিপস নিয়েই সাজানো।
১. মর্ডান এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ
মানুষের কর্মক্ষেত্র চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সম্ভাবনা বাড়ছে যে কোন দিক থেকে কম্পিউটারে হুমকি আসার। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আধুনিক এবং শক্তিশালী ইন্টারনেট সুরক্ষা সফটওয়্যারের ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে পর্যাপ্ত সুরক্ষা। আর আধুনিক এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি ব্যবহারের ফলে মিলতে পারে প্রয়োজনীয় ইন্টারনেন্ট সিকিউরিটি।
সাথে সাথে, ক্লাউড বেজড মনিটরিং কনসোল ব্যবহার শুরু করাটাও জরুরী। এতে যে কোন প্রান্ত থেকে নিশ্চিত করা যাবে ব্যবহারকারীর সাইবার নিরাপত্তা। ক্লাউড বেজড কনসোল এসবের সাথে সুবিধা দেয় অতীব দরকারী ফাইল সংরক্ষণেরও। বিশেষ ধরণের এনক্রিপ্টেড ফরম্যাটে কোম্পানীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ব্যাকআপ রাখা যাবে ক্লাউডে। এর ফলে দরকারী ফাইল বা ডাটা লসের সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটাই।
২. শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের ব্যবহার
পাসওয়ার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছে বহুদিন হল, কিন্তু এর গুরুত্ব কমেনি সামান্যতমও। এজন্যই পাসওয়ার্ড হওয়া উচিত ইউনিক এবং শক্তিশালী। “12345”, “abcd”, “admin” এধরণের কমন পাসওয়ার্ড এভয়েড করা উচিত যে কোন মূল্যে, তা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই হোক আর এন্টারপ্রাইজের জন্যই হোক।
একজন আইটি প্রফেশনাল বা অ্যাডমিনের দিক থেকে জরুরী হল, তার প্রতিষ্ঠানের সকল সহকর্মী যেন শক্তিশালী এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করা। নামের আদ্যাক্ষর, জন্মদিন কিংবা সন্তানের নামের মত বহুল ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড যেন সবাই অ্যাভয়েড করে সে সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য এক্সপার্টেরা নূন্যতম যেটুকু করতে বলেন তা হল
– ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতে বং ছোট হাতের, উভয় বর্ণ ব্যবহার করা
– পাসওয়ার্ডের মধ্যে সংখ্যা (নাম্বার) ব্যবহার করা
– স্পেশাল ক্যারেক্টার (%, $, ! ইত্যাদি) ব্যবহার করা
৩. সহকর্মীদের প্রপার গাইডলাইন প্রদান
প্রথমেই মেনে নিতে হবে যে, কোনও অফিসের সব কর্মচারীর কম্পিউটারের উপরে সমান ধারণা এবং দক্ষতা থাকবে না। যখন সম্পূর্ণ বিষয়টি অফিসের মধ্যে থাকে তখন প্রত্যেক কর্মচারীর ব্যবহার একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে মনিটরিং করা সহজ। কিন্তু সবাই যখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজ নিজ ঘর থেকে কাজ শুরু করে সে সময়ে সাইবার অ্যাটাক প্রতিহত করতে এবং জটিল পরিস্থিতি এড়াতে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হল সকলের সাইবার সচেতনতা বাড়ানো।
সেজন্য, সব কর্মচারীর সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই তা ধরে নিয়ে, এ সম্পর্কে প্রাথমিক একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করে সবাইকে সচেতন করে তোলা অতীব প্রয়োজনীয় । সাধারণত যে সব মাধ্যম থেকে কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ায় যেমন ইমেইল লিংক, অপরিচিত এবং আন্ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট ভিজিট, পাইরেটেড সফটওয়্যার ইত্যাদি থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সবাইকে সতর্ক করে দিতে হবে।
৪. সিকিউরড যোগাযোগের চ্যানেল প্রতিষ্ঠা
সফল যোগাযোগই যে কোন ব্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। বাড়ি থেকে কাজের নতুন যুগ শুরু হওয়ার সাথে সাথে যোগাযোগের এই ব্যাপারটি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের উপরে বেশি নির্ভরশীলই হয়ে উঠেনি, বাইরের কোন মাধ্যম থেকে এর আক্রান্ত হবার ঝুঁকির বেড়েছে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে, সবধরণের যোগাযোগের জন্য একটি সুরক্ষিত চ্যানেল তৈরি করার দিকে নজর দিতে হবে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সাথে সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তাই নিশ্চিত থাকতে হবে যে প্রতিটি কর্মীর সবধরণের পাসওয়ার্ডই যেন সুরক্ষিত থাকে এবং তা সহজে ক্র্যাক করা না যায়। তা পিসি, ওয়াইফাই সংযোগ, বা অনলাইন অ্যাকাউন্ট যে কোন কিছুর পাসওয়ার্ডই হতে পারে।
এছাড়াও যোগাযোগের জন্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত চ্যানেল ব্যবহার করতে আপনার সহকর্মীদের উৎসাহিত করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোন কনফিডেনসিয়াল তথ্য পাঠানোর প্রয়োজন পরে এবং ব্যবহারকারী সহকর্মী নিশ্চিত না থাকেন কীভাবে কনফিডেনশিয়ালিটি নিশ্চিত করে তা পাঠানো যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ আইটি প্রফেশনালের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া উচিত। এছাড়াও, যখন কোন অফিসিয়াল যোগাযোগের প্রয়োজন পরে তখন কোন চ্যাটবক্স বা মেসেজিং সফটওয়্যার ব্যবহারের চেয়ে অফিসিয়াল ইমেইলকেই ব্যবহার করাই শ্রেয়। এছাড়াও ভিডিও বা অডিও কনফারেন্সিং এর জন্য, সহকর্মীদের সবসময় একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বলুন। নিশ্চিত না থাকলে আইটি সেকশনের সাজেস্টেড প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করুন। প্রয়োজনবোধে সকল সার্ভিসের প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন কেননা পেইড সার্ভিস সাধারণত অধিকতর সুরক্ষিত হয়।
নীতিনির্ধারকদের শতকরা ৫৫%-ই মনে করেন যে রিমোট ওয়ার্কারদের জন্য বাড়িতে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা এখন অনেক অনেক জরুরী, সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে করা একটি জরিপে এমনটিই উঠে এসেছে। কোন প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সাইবার সিকিউরিটি জোরদার করার একটি অংশ হিসেবেই একে ভাবা যেতে পারে। আর তাই, এখনই উপযুক্ত সময় রিভ এনপয়েন্ট ক্লাউডের মত মর্ডান আর্কিটেকচার বেইজড, শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা সমগ্র প্রতিষ্ঠানের জন্যই। ক্ষতিকর অনলাইন আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা, ক্লাউডে এনক্রিপ্টেড ডাটা ব্যাকআপ, ক্লাউড বেজড কনসোল, এমপ্লয়ি অ্যাক্টিভিটি মনিটরিংসহ সবধরণের অত্যাধুনিক ফিচারে এই অ্যান্টিভাইরাসটি সমৃদ্ধ।
রিমোট ওয়ার্কের ক্ষেত্রে বাড়িতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই হল আমাদের তরফ থেকে ৪টি টিপস। চাইলে আরো দেখতে পারেন এই করোনার সময়ে ৫টি প্রধান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি কোনগুলো।