ইন্টারনেটের এখন সবেচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো করোনা ভাইরাস। মানুষ এ সম্পর্কিত খবরগুলো পড়ছেন, শেয়ার করছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের মতামত তুলে ধরছেন। সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বহু মানুষ। কিন্তু কিছু সাইবার অপরাধীরা একে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটে ফিশিং লিঙ্ক ছড়িয়ে মানুষের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। করোনা সম্পর্কিত গুজব তৈরি করে ফিশিং লিংকসহ ইমেইল পাঠানো হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যাম তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। তেমন কিছু উদাহরণ এখানে দেখানো হলো।
সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ইমেইলঃ
হুট করে আপনি আপনার ইমেইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নাম ও লোগোসহ ইমেইল পেতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এটা হতে পারে একটি ফিশিং ইমেইল। তেমন একটি উদাহরণ এখানে দেয়া হলো।
স্বাস্থ্য পরামর্শ সম্পর্কিত ইমেইলঃ
আপনি এমন ইমেইল পেতে পারেন যেখানে কিছু স্বাস্থ্য উপদেশ থাকবে এবং বলা থাকবে একটি লিঙ্কে গিয়ে আপনি আপনার সুস্বাস্থ্য পরিমাপ করতে পারবেন। এমনকি সুপরিচিত বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকের নামও এতে উল্লেখ থাকতে পারে। এমন একটি ফিশিং ইমেইলের উদাহরণ এখানে দেয়া হলো।
প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়ম ঘোষণাঃ
আপনাকে এমনভাবে একটি ইমেইল পাঠানো হবে যেন তা দেখে মনে হবে এটা আপনার প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ (HR) বিভাগ থেকেই এসেছে। বলা হতে পারে যেকরোনার এই সময়ে প্রতিষ্ঠান নতুন কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। মূলত এটিও হতে পারে একটি স্ক্যাম।
ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং-এ লোভনীয় অফারঃ
বিভিন্ন অনলাইন সাবস্ক্রিপশনের উপর নানা লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে। এখানে তার একটি উদাহরণ দেয়া হলো।
প্রেরকের ইমেইল আইডি চেক করুনঃ
করোনা সম্পর্কিত কোনো ইমেইল পেলে আগে দেখুন ইমেইলটি যে আইডি থেকে এসেছে তা পরিচিত কিংবা বিশ্বাসযোগ্য কোনো ডোমেইন থেকে এসেছে কিনা। ইমেইলের শেষে যদি প্রেরকের নাম দেয়া থাকে তা প্রেরকের ইমেইল আইডির সঙ্গে মিলছে কিনা দেখে নিন।
লিংক দেখলেই ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুনঃ
ইমেইল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে করোনা সম্পর্কিত কোন তথ্যের লিংক থাকলে তা ক্লিক করার আগে ডোমেইন অ্যাড্রেসটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে কিংবা সন্দেহজনক মনে হলে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
অপরিচিত কারও দেয়া কোনো ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুনঃ
অপরিচিত এবং সন্দেহজনক কোনো ইমেইল আইডি বা মোবাইল নাম্বার থেকে আসা অ্যাটাচমেন্ট ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
আপডেট রাখুন ফোন, কম্পিউটার ও অ্যাপস
আপনার ডিভাইস বা যে প্রোগ্রামগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত, সেগুলোকে আপডেট করে নিন। অধিকাংশ ব্রাউজারই নিজে থেকে আপডেট নিয়ে নেয়, কিন্তু অনেক অ্যাপই এ কাজটি করে না। এজন্য কোনো কিছু পড়া বা দেখার জন্য যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করছেন, সেগুলোর ওপর নজর রাখুন। নতুন কোনো আপডেট আসামাত্র আপডেট করে নিন। পুরোনো সংস্করণের অ্যাপে অনেক রকমের বাগ বা নিরাপত্তা ত্রুটি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের বাগ বা নিরাপত্তা ত্রুটির সুযোগ নিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা।
কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। স্পেশ্যাল ক্যারেক্টার এবং নম্বর যোগ করে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন
এর মানে হচ্ছে একবার পাসওয়ার্ড দেয়ার পরও আপনার পরিচয় দ্বিতীয়বার যাচাই করা ভিন্ন কোনো উপায়ে, এটা হতে পারে আপনার ফোনে কোনো পিন কোড পাঠিয়ে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
পরিচিত কারও পরামর্শ গ্রহণ করুনঃ
সন্দেহজনক কোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে আপনার অভিজ্ঞ সহকর্মী, বন্ধু বা পরিচিত কারও পরামর্শ নিতে পারেন। জিজ্ঞেস করুন যে তাঁর কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে কিনা বা আগ্রসর হওয়া ঠিক হবে কিনা।
লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুনঃ
কম্পিউটারে সবসময় ভালো মানের লাইসেন্সড অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে রাখুন।
এবং সচেতন থাকুন
মহামারীর সময়টিতে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে নানারকম তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোই অনুসরণ করবেন। তাহলে সাইবার অপরাধীরা সহজে আপনাকে বোকা বানাতে পারবে না। সম্ভব হলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র থেকে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিন।
ভুয়া খবর, গুজব ও ভ্রান্ত তথ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখুন এবং নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের বিষয় প্রচার বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।