প্রতিদিনই খবর আসে কারো না কারো ইমেইল আইডি বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড, কিংবা হ্যাকাররা বদলে দিয়েছে অমুক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য। মানুষ হ্যাকিংয়ের শিকার হয় কেন – শুনতে অনেক ভারী শোনালেও উত্তর কিন্তু খুব সহজ! সাধারণ কিছু ভুলের জন্য!!
জ্বী, আপনি ঠিকই দেখছেন, হ্যাকিংয়ের জন্য সাধারণ কিছু ভুলই কেবল দায়ী। চলুন তবে দেখে নেই ভুলগুলো কী কী, আর কীভাবেই বা সেসব থেকে বিরত থাকা যায়।
অনেকেই বা অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এখনও উইন্ডোজ এক্সপি কিংবা আইফোন ফোর ব্যবহার করছেন – কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে স্বয়ং মাইক্রোসফট এবং অ্যাপল এসব পণ্যের হালনাগাদ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। অনলাইনে সুরক্ষার জন্য সচেতনতার পাশাপাশি যুগোপযোগী প্রযুক্তি (হোক তা ডিভাইস কিংবা সফটওয়্যার) ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
সামান্য কিছু এমবি বাঁচাতে অনেকেই কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের অটো-আপডেট বন্ধ করে রাখেন। এতে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেননা উইন্ডোজ কিংবা অ্যান্ড্রয়েডের নিজের নিরাপত্তার উপর নির্ভর করছে আপনার একান্ততা।
তাই, এখনই আপনার কম্পিউটারের উইন্ডোজ এবং মোবাইলের সিস্টেম আপডেট ‘অটোম্যাটিক’ করে দিন। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন সব সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনও আপ-টু-ডেটেড রাখুন।
সেটিংসের এই অংশটা নির্দোষ হলেও অনেকেই না বুঝে ‘অফ’ করে রাখেন যা অনেক বড় একটি ভুল। ফায়ারওয়াল হচ্ছে ডিভাইসের প্রাথমিক সুরক্ষা কবচ। এটি নিষ্ক্রিয় থাকলে যেকোনো সময় আপনার ডিভাইস ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর প্রোগ্রামের শিকার হতে পারে।
বন্ধুর বাসায় বা হুট করে দূরে কোথাও বেড়াতে গিয়ে ফেসবুক বা মেইলে লগইন করেন, কাজ শেষ করে লগ আউট করেন তো? বেশীরভাগ সময় কেবল এই একটি ভুলের জন্য স্ক্যান্ডাল ছড়ায়! পাশাপাশি নিজের ডিভাইস ছাড়া অন্য কোথাও থেকে লগইন করার রিমাইন্ডার অপশন এলে তা ক্যান্সেল করে দিতে ভুলবেন না।
যত কাছের, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মানুষই হোক না কেন – কোনো অবস্থাতেই নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কখনোই অন্য কাউকে দিবেন না, জানাবেন না। অনেক সময় সম্পর্কের দোহাই দিয়ে পাসওয়ার্দ জানা ও পরে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে একান্ত তথ্য, ছবি ফাঁস করার ঘটনা ঘটে থাকে; তাই সচেতন থাকুন এমন সম্পর্কের বিষয়েও।
সফটওয়্যার বা অ্যাপ ইনস্টল করার সময় আমরা কী করি? ডাউনলোড করি বা সিডি থেকে ইনস্টলারটি চালু করে ‘আই এগ্রি’ চেপে ‘নেক্সট’ অনুসরণ করতে থাকি! অনেক সময় দেখা যায় এসব অ্যাপ্লিকেশন শুরুতেই ডিভাইসের ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন অ্যাকসেস নিয়ে নেয় যা হ্যাকারকে সার্বক্ষণিক ব্যবহারকারীর বিস্তারিত দিতে যথেষ্ট। তাই, এখন থেকে কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ ইনস্টল করার আগে অন্তত টার্মস এন্ড কন্ডিশনস একবার পড়ে নেয়া উচিত।
দোকান থেকে কম্পিউটার/মোবাইল ফোন কেনার সময় কিংবা অফিস থেকে ইমেইল সেটআপ করে দেয়ার সময় ডিফল্ট পাসওয়ার্ড সেট করে দেয়া থাকে। ঝামেলা এড়াতে কিংবা অলসতা করে অনেকেই তা আর নিজের মতো করে সেট করে নেন না। এতে যেকোনো সময় হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনলাইনে ব্যবহৃত প্রতিটি অ্যাকাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার পাশাপাশি কোনো সমস্যা না হলেও নির্ধারিত সময় অন্তর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয়া উচিত।
অনেকেই আছেন যারা হাতের কাছে যা পান, তাতেই ক্লিক করেন। এমন ক্লিক বিশেষত অপরিচিত কারো কাছ থেকে আসা ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া লিংকে ক্লিক না জেনে ক্লিক না করাই ভালো।
কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনের নিরাপত্তায় অ্যান্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য কম্পিউটারে ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও ফোনে মোবাইল সিকিউরিটি ব্যবহার না করলে যেকোনো সময় অনলাইন প্রাইভেসি কম্প্রোমাইজ হতে পারে। তাই, নিরাপদ থাকতে অবশ্যই বাজার থেকে দেখেশুনে যাচাই করে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাসের লাইসেন্সড ভার্সন ক্রয় করে ব্যবহার করা উচিত।