কেনাকাটা বা লেনদেনে আমরা কী করি? নগদ টাকা দেই কিংবা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেই। নগদে দিতে গেলে প্রচলিত কাগুজে মুদ্রা লাগে, আর ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে চেকে কিংবা কার্ডে পে করা হয়, সহজ উত্তর! কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই কাউকে না কাউকে চাক্ষুষ সাক্ষী রাখতে হয়, যেমন নগদে নিলে টাকাই সাক্ষী আর ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ব্যাংক তৃতীয় পক্ষ হিসাবে সাক্ষী থাকে। প্রচলিত এই লেনদেন প্রথার বাইরে গিয়ে তৃতীয় মাধ্যম ছাড়া লেনদেনের উপায় হিসাবে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে একজন বা একদল মানুষ ২০০৮ সালের অক্টোবরে অনলাইনে এক ‘উদ্ভট’ ধারণা প্রকাশ করেন।
‘Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System’ নামক ৯ পৃষ্ঠার ঐ গবেষণা প্রস্তাবনায় একটি ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা পরিশোধ ব্যবস্থার কথা বলা হয়, যেটির মাধ্যমে একজন অন্যজনকে কোন তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না গিয়েই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবে!
এই ব্যবস্থায় সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন হবে আস্থার পরিবর্তে ‘কাজের (লেনদেন) প্রমাণের’ ভিত্তিতে এবং সব ধরনের লেনদেন একটি নিদিষ্ট নেটওয়ার্কে লিপিবদ্ধ হবে। সাতোশি নাকামোতো আসলে কে – তা আর না জানা গেলেও তিনি বা তাঁরা পরে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রথম বিটকয়েন মুদ্রা রিলিজ করে আইডিয়ার বাস্তব রুপও দেখিয়ে দেন।
এরপর ২০১০ সালের ২১ মে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১০,০০০ বিটকয়েনের বিনিময়ে এক ক্রেতা লাসজলো ফাস্টফুড থেকে ২৫ ডলার মুল্যের একটি পিৎ’জা কিনে এর বাস্তব ব্যবহার শুরু করেন। ভয় পাবেন না বললে জানাতে পারি বর্তমানে এক বিটকয়েন সমান প্রায় সাড়ে সাত হাজার ডলার!!
বিটকয়েন কী?
বিটকয়েন হচ্ছে একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক যেখানে আস্থাভাজন তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই মুদ্রার মালিকানা পরিবর্তন সম্ভব, আর এই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত একক হচ্ছে ‘bitcoin’ (B) যেটি সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল উপায়ে ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে কম্পিটার কোডিং ব্যবহার করে তৈরি হয়।
বিটকয়েন যেভাবে কাজ করে
পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক হওয়ার কারণে বিটকয়েনের ট্রানজেকশন বা লেনদেন সেবা দাতা ও গ্রহীতার ‘ওয়ালেট’ থেকে ‘ওয়ালেটে’ সম্পন্ন হয় (অনেকটা আমাদের এখানে প্রচলিত বিকাশের মতো!)। ‘ওয়ালেটে’ বিটকয়েন রাখা থাকে, ব্যবহারকারীকে দুটি ‘কী’ দেয়া হয়। একটি ‘পাবলিক কী’ যা দিয়ে প্রাপ্য আনা যায়। আর, অন্যটি ‘প্রাইভেট কী’ যা দিয়ে খরচ বা পে করা হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে- সামগ্রিক বিটকয়েন ট্রানজেকশন একটি উম্মুক্ত খতিয়ানে (পাবলিক লেজার) রেকর্ড করা থাকে, যাকে ‘ব্লক চেইন’ বলে। এক্ষেত্রে যার যার ‘পাবলিক কী’ দিয়ে লেনদেন প্রকাশ করা হয়। ব্লকচেইনের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে শুরুর ট্রানজেকশন থেকে সর্বশেষ পর্যন্ত সব লেনদেন এখানে সংরক্ষিত আছে, পাবলিক এবং তা নিয়মিতভাবে আপডেট করা হচ্ছে।
বিটকয়েনের অপকারিতা
টেসলা, ওয়ার্ডপ্রেস এবং পে পাল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিটকয়েনকে হ্যাঁ বললেও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন: লেনদেন পুনরাবৃত্তি না করতে পারার কারণে, সেবা গ্রহিতা সংশ্লিষ্ট সেবা না পেলে, মুদ্রা ফেরত পাওয়ার উপায় নেই। আবার, বিটকয়েন ‘ওয়ালেট’ হারিয়ে বা নষ্ট (ড্যামেজ) হয়ে গেলে এটি আর ফিরে পাওয়া যায়না। পাশাপাশি, পরিচয় গোপন রেখে লেনদেন করা যায় বলে অনেকের আগ্রহের কারণে ধীরে ধীরে বিটকয়েনের বিপরীতে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থা।