দুঃস্বপ্নের রাত পেরিয়ে অবশেষে হার মানলো ‘ওয়ানাক্রাই’। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্তত ৩০ জন সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কম্পিউটারের সব ফাইল ‘লক’ করে দেয়া এই র্যানসমওয়্যারের বিস্তার ‘দৈবচক্রে’ আটকে দিয়েছেন ব্রিটেনের তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞ মার্কাস হাচিনস। কিন্তু, তিনি নিজেও আশঙ্কা করছেন যেকোনো সময় তা আরও ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করতে পারে।
‘ম্যালওয়্যারটেক’ ছদ্মনামে পরিচিত ২২ বছর বয়সী ওই গবেষকের বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় – ওয়ানাক্রাইয়ের কোডে থাকা একটি ‘কিল সুইচ’ খুঁজে পাওয়ার পর এটি ছড়ানো বন্ধ করে দিতে সক্ষম হন তিনি। তিনি বলেন, সারারাত তদন্তের পর এটি আসলে ‘অনেকটা দুর্ঘটনাবশত’ হয়েছে! যদিও এতে র্যানসমওয়্যারের কারণে হয়ে যাওয়া কোনো ক্ষতি পূরণ হবে না, কিন্তু এর ফলে এই ম্যালওয়্যার আর অন্য কোনো কম্পিউটারে নতুন করে ছড়াবে না। এ ঘটনায় মার্কাস হাচিনসকে ‘দৈব নায়ক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে!
কীভাবে এই অসাধ্য সাধন হলো – উত্তরে এই সাইবার গবেষক জানান তিনি হুট করে খেয়াল করেন যে এই ম্যালওয়ার প্রতিবার কোনো নতুন কম্পিউটারে আঘাত হানার সময় একটি নির্দিষ্ট ওয়েব অ্যাড্রেসে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই ওয়েব অ্যাড্রেস আসলে বিভিন্ন অক্ষর মেশানো একটি লম্বা বাক্য ছিল, আর ওই নামে কোনো ওয়েবসাইট নিবন্ধিত ছিল না। গবেষক ওই বাক্যের ঠিকানাটি নিবন্ধন করে ফেলেন আর এটি ১০.৬৯ ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন। এর মালিকানা পাওয়ার পর কোন কোন কম্পিউটার থেকে এটি অ্যাকসেস করা হচ্ছে তা দেখার সুযোগ পান তিনি, সেই সঙ্গে কীভাবে এই র্যানসমওয়্যার ছড়াচ্ছে তার ধারণাও পেয়ে যান। এমনটা করার সময়, অপ্রত্যাশিতভাবেই র্যানসমওয়্যারটিতে থাকা ছড়ানো বন্ধ করে দেওয়ার অংশটি বন্ধ করে দেন তিনি। তবে, এর মাধ্যমে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে এই র্যানসমওয়্যার ছড়ানো বন্ধ হলেও, আক্রান্ত কম্পিউটারগুলো ঠিক হবে না। পাশাপাশি এতে আপাতত ওয়ানাক্রাইয়ের বিস্তার বন্ধ হলেও এমন হতে পারে যে ওয়ানাক্রাই যারা ছড়িয়েছে তারাই আবার সামনে নতুন ম্যালওয়্যার নিয়ে আসতে পারে যাতে হয়তো ‘কিল সুইচ’ থাকবে না।
মার্কাস হাচিনস বলেন, “আমরা এই একটিকে থামাতে পেরেছি, কিন্তু সামনে আরেকটি আসতে পারে আর হয়তোবা সেটি আমাদের পক্ষে থামানোর মতো হবে না। এখানে অনেক অর্থ আছে, তাদের (আক্রমণকারীদের) থামার কোনো কারণই নেই। কোডটি বদলে আবারও শুরু করাটা তাদের জন্য খুব একটা বেশি কিছু নয়।”
১২ মে ২০১৭, শুক্রবার রাত থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশের ২,৩০,০০০ কম্পিউটার অচল করে দেয় ওয়ানাক্রাই। আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যবহারকারী আর তাঁর কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারছেন না, বা প্রয়োজনীয় ফাইল অ্যাকসেস করা যাচ্ছে না। এর বদলে কম্পিউটার চালু করা হলে হ্যাকারের কাছ থেকে একটি বার্তা আসে যেখানে কম্পিউটারের অ্যাকসেস পেতে কীভাবে এবং কত ‘মুক্তিপণ’ দিতে হবে তা প্রদর্শন করা হয়। ওয়ানাক্রিপ্ট নামেও পরিচিতি পাওয়া এই ম্যালওয়্যারের আক্রমণের শিকার হচ্ছিলেন মূলত চলতি বছরের মার্চ থেকে আর হালনাগাদ না করা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা। ভুল লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করা থেকে এটি ছড়াতে শুরু করে। আর, কোনো কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেখানে সংরক্ষিত ডাটা ও ফাইল ‘এনক্রিপ্টেড’ করে ফেলাই ছিল এর কাজ। হ্যাকড কম্পিউটারগুলো চালু করলে এখনও সেখানে বার্তা আসছে-
“কম্পিউটার আপনার, তথ্য আপনার, কিন্তু আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না! মুক্তিপণ বাবদ বিটকয়েনের মাধ্যমে এখন দিলে দিতে পারেন ৩০০ ডলার আর ছয় ঘণ্টা পর হলে ৬০০!! দিতে না পারলে কিন্তু আর ফাইলগুলি ফেরত পাবেন না!!!”
বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী র্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যাঁরা উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করছেন, তাঁরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়াও, উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহারকারীদেরও নিরাপত্তা প্যাঁচ হালনাগাদ করে নেয়া উচিত এখনই। র্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষিত থাকতে এখানে কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হলো-
র্যানসমওয়্যার সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা বা সাহায্যের জন্য দিন-রাত যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে পারেন রিভ অ্যান্টিভাইরাস সাপোর্ট সেন্টারে: 01844079181